
জল-স্থলপথে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির সতর্ক পাহারা
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নাফনদী-স্থলপথ অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যাতে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেও কাজ করছে তাঁরা (বিজিবি)।
শনিবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলার নাফনদ এবং সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে বিজিবির সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। তবে গত বুধবার রাখাইনে চলমান সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকা ডুবির ঘটনায় গত তিন দিনে টেকনাফের নাফনদ-সমুদ্র সৈকতে শিশুসহ ৪৪ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া এক নারীসহ দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন স্থানীয় জেলেরা।

এদিকে, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। ফলে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার জল-স্থলপথে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবরে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন করে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি। এছাড়া স্থানীয় জেলেদের রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবিকে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সংঘাত রোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিজিবির বিশেষ টহল অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে বিজিবি জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলছেন। মাদকের চালান প্রতিরোধেও বিজিবি চেকপোস্টগুলোতে নিয়মিত তল্লাশি চালু রয়েছে।
অন্যদিকে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষে গোলার বিকট শব্দে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে। এতে সীমান্তের মানুষের মাঝে আতঙ্ক কাটেনি।
এ বিষয়ে টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা সৈয়দ হোছাইন বলেন, ‘সকাল থেকে সীমান্তজুড়ে বিকট গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। এতে এখানকার বসবাসকারী মানুষের মাঝে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। এছাড়া সীমান্তে নাফনদীর পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিজিবি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি টহল বৃদ্ধি করেছে।’
উপকূল দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে স্বীকার করেছেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ঠেকাতে নতুন করে মেরিন ড্রাইভে বিজিবির টহল বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া বিভিন্ন চেকপোস্টে বিজিবি তল্লাশি জোরদার রেখেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে স্থানীয়দের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।’
সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পারাপার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘এখনো মিয়ানমারের সেদেশে চলমান যুদ্ধ চলছে। তাই আমরা সীমান্তে আমরা সর্তক অবস্থা রয়েছি, যাতে করে কোন অনুপ্রবেশর ঘটনা না ঘটে। এছাড়া ওপাড় থেকে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’