গণহত্যাকারী, জালিম ও স্বৈরাচার সরকারের পতন পরবর্তী দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে
সংবাদ সম্মেলন
০৭ আগস্ট’২৪, বুধবার, দুপুর ১২টা
আইএবি মিলনায়তন, ৫৫/বি পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসুলিহিল কারীম, আম্মাবাদ
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় এবং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের ভাবনা জাতির সামনে তুলে ধরার নিমিত্তে আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
জাতির এই মহান অর্জনের যারা জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহতদের পাশে দাড়ানোর সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নৃশংস আওয়ামী দুঃশাসন উৎখাতের সংগ্রামের সূচনা করেছে আমাদের গর্ব শিক্ষার্থী সমাজ। তাদের অসীম সাহস, ত্যাগ ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব আমাদের গর্বিত করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছে। ১৯ জুলাইতেই আমরা পরিস্কার করে জানিয়েছি যে, সরকারের পদত্যাগই একমাত্র সমাধান। শুরু থেকেই নানা মাত্রায় ও নানা ধরণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সেজন্য আমরা গর্ব বোধ করি যে, নৃশংস এক জালিমের পতনের মহান বিপ্লবে আমরা ভূমিকা নিতে পেরেছি। আমাদেরও অনেক ভাই জীবন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। এখন সময় দেশ গড়ার। এখন সময় সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণের। এই যুগ সন্ধিক্ষনে আগামী পরিকল্পনা হিসেবে আমরা কিছুু প্রস্তাব তুলে ধরতে চাই।
১. অনতিবিলম্বে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে অনুর্ধ্ব ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হতে পারবে না।
২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
৩. গ্রহনযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আহত/নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ বছরে সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৫. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৬. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
৭. নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (চ.জ) চালু করতে হবে।
৮. আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯. উলামায়ে কেরাম জাতির ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। তারা উম্মাহর ঈমান-আমল রক্ষায় কাজ করেন। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি অবশ্যই থাকতে হবে।
ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন হত্যা, লুটতারাজ ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের বিরুদ্ধে ছিলো। শিল্প ও কল-কারখানা ধ্বংসের বিরুদ্ধে ছিলো। এখন যদি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে কেউ একই রকম কাজ করেন তাহলে তা স্ববিরোধিতা হয়ে যায়। সেজন্য আমরা বিশ্বাস করি, যারা লুটতরাজ, দখলদারী ও অরাজকতায় লিপ্ত তারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত কেউ না। বরং তারা সুযোগ সন্ধানী। আমরা দৃঢ়তার সাথে সবাইকে আহবান করছি যে, এখনই সব ধরণের অরাজকতা বন্ধ করুন। যারা অরাজকতা করছে তাদের প্রতিরোধ করুন। যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করছে তাদের প্রতিরোধে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করুন।
প্রিয় সাংবদিক বন্ধুগণ!
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, দেশের সকল নাগরিক সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রাপ্ত। ধর্মের কারণে কাউকে আঘাত করা বা কাউকে প্রতিপক্ষ বানানোকে ইসলাম ও রাষ্ট্রিয় আইনও সমর্থন করে না। আমাদের আন্দোলনের চেতনাও তা সমর্থন করে না। সেজন্য বলবো, দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিটি উপসানালয় ও ধর্মীয় স্থাপনায় পাহারার ব্যবস্থা করুন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু করেছে এবং তা অব্যহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। উক্ত ৯ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে নিন্মোক্ত কর্মসূচি ঘোষনা করছি।
কর্মসূচি
৯ আগস্ট’২৪ শুক্রবার বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে বিশাল গণ জমায়েত।
পর্যায়ক্রমে বিভাগ ও জেলা শহরে সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
প্রিয় সাংবদিক বন্ধুগণ!
পরিশেষে আবারো গণঅভ্যুত্থানে জীবন দানকারী ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম
আমীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ