1. dailysonbad@gmail.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. newsroom@dailysongbad71.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

শিশু-কিশোরদের অনুপ্রেরণা শেখ রাসেল

সংবাদ ৭১ ডেক্স
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪
  • ২৩৯ বার দেখা হয়েছে

ইতিহাসের নিকৃষ্টতম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল। মাত্র ১০ বছর ১০ মাস বয়স।

ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর স্কুল ড্রেস পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকার কথা ছিল তার। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাবেন সমাবর্তনে যোগ দিতে। তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেবে ল্যাবরেটরি স্কুলের শিশুরা। সারা দেশ অপেক্ষায় ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হওয়ার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস-১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। শেখ রাসেল অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করে বলেছিলেন, ‘মায়ের কাছে যাব’। বর্বর ঘাতকরা তাণ্ডব শেষে ঠান্ডা মাথায় হাসতে হাসতে গুলি করে হত্যা করে শিশু রাসেলকে। অথচ তার তখন রাজনীতি ও পৃথিবী সম্পর্কে বুঝে ওঠার মতো বয়স হয়নি।

শেখ রাসেলের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর। তখন হেমন্তকাল। নবান্নের নতুন ফসলের উৎসবে আগমন নতুন অতিথির। ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাসায় শেখ হাসিনার (আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) কক্ষেই রাত দেড়টায় জন্ম হয় শেখ রাসেলের। রাসেলের আগমনে পুরো বাড়িতে বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শিশু রাসেল সর্বকনিষ্ঠ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার রচিত ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ে লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুপু ও মেজো ফুপু মার সঙ্গে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজো ফুপু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুপু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুপু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়সড় হয়েছিল রাসেল।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত। তার বই তিনি পড়তেন। বার্ট্রান্ড রাসেল শুধু একজন দার্শনিকই ছিলেন না, বিজ্ঞানীও ছিলেন। ছিলেন পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের বিশ্বনেতাও। তার নামানুসারেই বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখা হয় রাসেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ে লিখেছেন, ‘আব্বা বার্ট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে, নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখলেন।’

১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট দশটি বছর শেখ রাসেলের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বঙ্গবন্ধুর এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার পথে অগ্রযাত্রা, আর রাসেলের বেড়ে ওঠা-সমান্তরাল পথচলা। বাঙালি জাতির জেগে ওঠা এবং মুক্তিসংগ্রামের প্রতীকী শিশু শেখ রাসেল। রাসেল তার জীবনের প্রথম ৭ বছর মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে ব্যস্ত পিতার সঙ্গ থেকে বঞ্চিত ছিল। রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত। রান্নাঘরে গৃহকর্মীদের সঙ্গে বসে ভাত খেতে পছন্দ করত। নিজের হাতে খাবার দিত পোষা কবুতরকে। মুরগি জবাই হলে রক্ত দেখে ভয় পেত। নিবিষ্টমনে অঙ্ক কষত গৃহশিক্ষিকার কথামতো। টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় গ্রামের বন্ধুদের জন্য পোশাক নিয়ে যাওয়ার বায়না ধরত।

রাসেলের জন্মের পর বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে জেলবাস করেছেন। তাই শিশু রাসেলের বাবার সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ খুব কমই হয়েছে। রাসেলের সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী ছিলেন তার হাসুপা (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)। শৈশবে রাসেল যখনই বাবাকে কাছে পেত, সারাক্ষণ তার পাশে ঘোরাঘুরি করত। খেলার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে এক পলকের জন্য হলেও দেখে আসত। এরই মধ্যে জন্ম হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের। জয়কে পেয়ে তো রাসেল মহাখুশি। সে তার খেলার নতুন এক সঙ্গী পেয়েছে। সারাটা সময় জয়ের সঙ্গে মেতে থাকত রাসেল। রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল, কিন্তু সে মাছ ধরে আবার তা পুকুরেই ছেড়ে দিত। এতেই সে মজা পেত। বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটি পোষা কুকুর ছিল টমি নামে। ছোট্ট রাসেল টমিরও সঙ্গে খেলত। এভাবে কেটে যাচ্ছিল শেখ রাসেলের দিনগুলো।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে একদল বিপথগামী তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাংক দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন ঘিরে ফেলে বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সঙ্গে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। ছোট্ট রাসেলের দোষ কী ছিল জানেন? তার পিতা বাংলা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকেই বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে উগ্রবাদী শক্তি। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার জন্য নির্মমভাবে খুন করে শিশু রাসেলকেও। যুগে যুগে ষড়যন্ত্রকারী-বিশ্বাসঘাতকদের হাতে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এ পৃথিবীতে। কিন্তু শিশু রাসেলকে যেভাবে পিতা-মাতা, ভাই-ভাবিদের রক্তভেজা লাশের পাশে নিয়ে পৈশাচিক উল্লাস করেছে খুনিরা, এমন নির্মম-নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড আর কোথাও ঘটেনি।

রাসেল বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৫৯ বছর। আমরা এখন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে চিন্তা করছি। বেঁচে থাকলে তিনিও হয়তো শামিল হতেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে। তিনিও নিঃসন্দেহে নিজেকে দেশের জন্য নিয়োজিত রাখতেন। তিনিও হয়তো জাতির পিতার মতো বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার কান্ডারি হতেন। কিংবা হতে পারতেন বার্ট্রান্ড রাসেলের মতোই স্বমহিমায় উজ্জ্বল বিশ্বমানবতার প্রতীক। শিশু রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকরা মানবসভ্যতার ইতিহাসে জঘন্যতম অপরাধ করেছে। এ ধরনের নিষ্ঠুর ‘মার্সি কিলিং’ শুধু রাসেলের জীবনই কেড়ে নেয়নি, সেই সঙ্গে ধ্বংস করেছে তার সব অবিকশিত সম্ভাবনাকেও।

শেখ রাসেল ছিলেন প্রাণচঞ্চল, বন্ধুবৎসল ও মানবিক। নিষ্পাপ ও নির্মল শেখ রাসেল আমাদের শিশু-কিশোরদের কাছে অনুপ্রেরণার নাম। দশ বছর বয়সেই তার নেতৃত্বগুণ, সহনশীলতা ও ধৈর্যের প্রকাশ আমরা দেখতে পাই। ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়’-এ প্রতিপাদ্য নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে তৃতীয়বারের মতো জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২৩’ আমরা পালন করছি। এ দিবস পালনের মাধ্যমে শেখ রাসেলের বেড়ে ওঠা, মানবিকতা, উদারতা, অতিথিপরায়ণতা এবং তার দশ বছর জীবনের জীবন সংগ্রাম-এ সবকিছু আমরা তুলে ধরতে চাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। শেখ রাসেলের নির্মল, দুরন্ত ও প্রাণবন্ত শৈশব প্রত্যেক শিশুর কাছে তুলে ধরতে এবং প্রতিটি শিশুকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও নির্ভীক সোনার মানুষে পরিণত করতেই এ উদ্যোগ।

আমি ১৯৭৫ সালের আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই এবং শিশু রাসেলসহ সেই হত্যাকাণ্ডের সব শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

© 2024, All rights reserved. এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। এখানে নিজস্ব সংবাদ প্রচার সহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ সুত্র সহ প্রকাশ করা হয়। অনুগ্রহ পূর্বক কেহ অভিযোগ করিবেন না। তাছাড়াও কোন অভিযোগ থাকলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট
error: এখানে নিজস্ব সংবাদ প্রচার সহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ সুত্র সহ প্রকাশ করা হয়। অনুগ্রহ পূর্বক কেহ অভিযোগ করিবেন না। তাছাড়াও কোন অভিযোগ থাকলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।