আগামীকাল শনিবার পবিত্র হজ। তার আগে আজ শুক্রবার মিনায় অবস্থান করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এ কারণে বৃহস্পতিবার এশার পর থেকেই মুসল্লিরা ইহরামের কাপড় পরে ‘তাঁবুর শহর’ মিনায় সমবেত হতে শুরু করেন। লাখো মুসল্লির সমাগমে এখানে অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয়েছে।
মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনা। হজের অংশ হিসেবে মুসল্লিরা ৭ থেকে ১২ জিলহজ মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় অবস্থান করবেন।
এখন মিনার যেদিকে চোখ যায়—তাঁবু আর তাঁবু। তাঁবুতে প্রত্যেকের জন্য আলাদা ফোম, বালিশ, কম্বল বরাদ্দ। ফোমের নিচে বালু। হজযাত্রীরা নিজ নিজ তাঁবুতে নামাজ আদায়সহ নানা ইবাদত করছেন। মিনায় রাতযাপন জীবনের এক পরম পাওয়া। শনিবার থেকেই ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর হবে মক্কার ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান।
শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে আরাফাত ময়দানের উদ্দেশে রওনা হবেন হাজিরা। আরাফাত ময়দানে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন তারা। তারপর সূর্যাস্তের সঙ্গে হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং রাতে সেখানেই অবস্থান করবেন। পথে শয়তানকে নিক্ষেপ করার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়া বলেছেন, হজ পালনে আল্লাহর অতিথিদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার ও সৌদির জনগণ অংশ নেবে।
পরিবহন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার মতো স্থানগুলো একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার জন্য থাকবে উড়ন্ত ট্যাক্সি, ট্রেন ও বাস। সবখানে বিশেষ করে মিনায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হাজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা।
আল-রাবিয়া বলেন, আল্লাহর অতিথিদের স্বস্তি নিশ্চিত করতে ও হজে একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কয়েক বছর ধরেই কঠোর পরিশ্রম করছে সৌদি সরকার।
পবিত্র নগরী মক্কা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাত ময়দানে হাজিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে সৌদি প্রশাসন। নারী নিরাপত্তাকর্মীরা হাজিদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন বিতরণ ও হজের নিয়মকানুন শিখিয়ে দেবেন। হজ চলাকালীন হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক দল কাজ করবে। পাশাপাশি হজযাত্রীদের দ্রুত সেবা দিতে থাকছে অ্যাম্বুলেন্সও। এ বছরই প্রথম হজযাত্রীদের জন্য উড়ন্ত ট্যাক্সি চালু করেছে সৌদি আরব। বুধবার এর উদ্বোধন করা হয়। হাজিরা পবিত্র স্থানগুলোর মধ্যে যাতায়াত, পণ্য পরিবহনসহ জরুরি চিকিৎসা কাজে ট্যাক্সিটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এদিকে, হজের এ বিশাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রশাসনিক প্রতিনিধিদল সৌদি আরব পৌঁছেছে অনেক আগেই। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার জন্যও এসেছে চিকিৎসক দল। এবারই প্রথম বাংলাদেশি হাজিদের সেবায় সৌদি আরবে অধ্যয়নরত প্রবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এবার বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ১২৯ জন (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) হজ পালন করবেন। হজ পালন করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মক্কায় ১৩ জন ও মদিনায় মারা যান চারজন। তাদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও দুজন নারী।