1. dailysonbad@gmail.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. newsroom@dailysongbad71.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
তিন জিম্মির বিনিময়ে আজ ৩৬৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিচ্ছে ইসরায়েল ‘যেনতেন মার্কা নির্বাচন’ জাতি চায় না: জামায়াত আমির সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে নারী ও শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ যশোরে ভাগ্নে ইমন ও সোহাগ রানা নামে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক,অস্ত্র জব্দ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক আজ বিকালে কুমিল্লায় তাহেরীর আগমনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ গ্রেফতার প্রবাসীদের জন্য বিমান টিকিটের দাম কমাচ্ছেন, জানালেন আসিফ নজরুল মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে কবি সোহেল হাসান গালিব গ্রেফতার আমির হোসেন আমুর ব্যক্তিগত সহকারী আবুল কালাম আজাদ গ্রেফতার

ভাষা আন্দোলনের কারণ, প্রয়োজনীয়তা এবং তাৎপর্য

সংবাদ ডেক্স
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪
  • ১৯৮ বার দেখা হয়েছে

আপাত দৃষ্টিতে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালকে বাংলার ভাষা আন্দোলনের সময়সীমা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও মূলত বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) সংগঠিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন- মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি গণদাবির বহিঃপ্রকাশ। এই “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই”- এর গণদাবি থেকেই মূলত স্বাধীন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’র গণদাবি ওঠে।

১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারতবর্ষ ভেঙে তিন খণ্ডে দু’টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। একটি রাষ্ট্র আজ অবধি অখণ্ড টিকে গেলেও আরেকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরের মাথায় ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়া দ্বিতীয় রাষ্ট্রটি পাকিস্তান। দুই ভৌগলিক খণ্ডে জন্ম নেওয়া এই দেশটি এতটাই অদ্ভুত ভৌগলিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে সৃষ্টি হয় যে, প্রতিষ্ঠার শুরুতেই এর পতন নিশ্চিত হয়ে যায়। পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রাণ দেয় বাঙালিরা। ১৯৪৭ সালে গঠিত পাকিস্তান এরপর অখণ্ড হিসেবে টিকেছে মাত্র ১৯ বছর। ১৯ বছর পর থেকেই বাঙালির জাতীয়তাবাদের চেতনা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে অলাদা করে ফেলে। পরিশেষে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়ে যায় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান। গঠিত হয় নতুন স্বাধীন দেশ- বাংলাদেশ।

ইতিহাসবিদদের মতে, মূলত ১৯৪৮ থেকে ভাষা আন্দোলনের যে চেতনা বাঙালির ভেতরে জাগ্রত হয়েছিল এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় বাংলার প্রতি যে মাতৃত্ববোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ববোধের জন্ম হয়েছিল সেই থেকেই বাংলার মানুষের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীনতার নেশা সৃষ্টি হয়েছিল। ভাষা অন্দোলন থেকে মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব। আর এই জাতীয়তাবাদের শক্তিই বাঙালিকে একত্রিত করে স্বাধীন রাষ্ট্রের সূচনা করেছিল।   ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল অনিবার্য। বলা চলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আদিপর্ব। তৎকালীন সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশ নয়, বরং একটি ঔপনিবেশের মতো শাসন করার নীতি গ্রহণ করে, অনেকটা ব্রিটিশ ঔপনিবেশের মতো করেই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে শোষণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবেও কঠোর দমন-পীড়ন করতে থাকে। বাংলার মানুষ ব্রিটিশ ঔপনিবেশ শাসন থেকে আরেকটি ঔপনিবেশ শাসনের কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। বাংলার মানুষদের দমনের চীর ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা বাংলা’র পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে।

‘ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা’- শীর্ষক গ্রন্থে ড. অজিত কুমার দাস ভাষা আন্দোলনের কারণ হিসেবে লিখেছেন, “আমরা দেখেছি যে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি সম্পন্ন হবার পর নবগঠিত ভারত রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ দেশে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তণের নীতি গ্রহণ করেন। অপরদিকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও মুসলিম লীগ নেতৃত্ব দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির সংসদীয় শাসন অর্থাৎ জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ না করে- পূর্ব বাংলার নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর এক ঔপনিবেশ সুলভ নীতি চাপিয়ে দিতে চায়। এই নীতির অংশ হিসেবে তারা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা’র পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। যেখানে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬% লোক বাংলা ভাষা এবং মাত্র ৭% লোক উর্দু ভাষায় কথা বলে- সেখানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অর্থই ছিল বাঙালি জনগণকে দাবিয়ে রাখা, শোষণ করার এক ষড়যন্ত্র।”

বিজ্ঞজনদের মতে, ভাষা এমন একটি বিষয়- যার মাধ্যমে মানুষের সকল দক্ষতা প্রকাশের চূড়ান্ত রূপ মেলে। ফলে বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংসের নিমিত্তে ভাষাকেই প্রধান লক্ষ্য করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিরা। কেননা রাষ্ট্রভাষায় দক্ষতা না থাকলে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে, আর এতে বাঙালিরা অবাঙালিদের থেকে পিছিয়ে পড়বে- এমনটাই ছিল পাকিস্তানিদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

অজিত কুমার দাস তার বইয়ে আরও লিখেছেন, “বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুটি। প্রথমত, পূর্ব বাংলার জনগণকে নেতৃত্বশূন্য ও আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা। কারণ, বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে বাঙালি জনগণকে চাকরি তথা প্রশাসনে অংশগ্রহণের জন্য একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষার বোঝা বহন করতে হতো। এতে করে বাঙালির স্বাভাবিকভাবেই অবাঙালিদের থেকে পিছিয়ে পড়তো।”

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে অজিত কুমার দাস উল্লেখ করেছেন, ভাষায় আঘাতের মাধ্যমে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি বাংলার মানুষের যে গভীর যোগাযোগ, সেই যোগাযোগকে শিথিল করে দেওয়ার চেষ্টা করঅ হয়েছে। কেননা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি টান দুর্বল হয়ে গেলে বাঙালিরা আত্মপরিচয় ভোলা জাতিতে পরিণত হবে এবং এতে তাদের মধ্যে স্বাধীনতার বাসনা কোনোদিনই জাগবে না।

এ প্রসঙ্গে অজিত কুমার দাস লিখেছেন, “দ্বিতীয়ত, পূর্ব বাংলার জনগণ বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত ছিল। তারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য গর্ববোধ করতো। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ ছিল তাদের আদর্শ, চেতনা, মূল্যবোধ। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের এমন বাঙালি সংস্কৃতি প্রীতিকে সন্দেহের চোখে দেখতো। তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে হিন্দুদের সংস্কৃতি বলে মনে করতো। তারা আরও মনে করতো যে, পূর্ব বাংলার জনগণের এ ধরনের সংস্কৃতি চর্চা ভারতের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।”

ভাষা নিয়ে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রের কারণ হিসেবে অজিত কুমার দাস উপসংহার টেনে লিখেছেন, “মোটকথা, পূর্ব বাংলার জনগণের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে তাদের নেতৃত্বশূন্য এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যেই পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং এই ষড়যন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।”

এসব কারণেই ভাষা আন্দোলন অনিবার্য হয়ে পড়ে। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলনের যথেষ্ঠ তাৎপর্যও রয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের মাত্র ৫ বছরের মাথায় ঢাকায় পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। আর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে রক্ত ঝরেছিল বাঙালি ছাত্রদের।

ভাষা আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে গবেষক এবং কলামিস্ট ড. বিএম শহীদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘সুদীর্ঘ প্রায় দুইশ’ বছর ব্রিটিশদের অপশাসন ও কুশাসনের অবসান ঘটার পর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে ভারত গঠিত হলেও শুধু ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের আদর্শগত কোনো যোগসূত্র ছিল না বললেই চলে। মূল কারণ হিসেবে বলা যায়, উভয় অঞ্চলের মধ্যকার ভাষাগত বিরোধ। ভাষাগত বিরোধের কারণে বাংলার জনগণ পাকিস্তানের মৌলিক আদর্শের (Fundamental Ideology) সঙ্গে কখনও একাত্মতা অনুভব করতে সক্ষম হয়নি। এছাড়া পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি নানাভাবে বৈষম্যমূলক নীতি আরোপ করা হয় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। মূলত এসব কারণেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরেই ভাষা আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং ১৯৪৭ সালের সেপ্টেন্বরে পূর্ব বাংলায় ‘তমুদ্দুন মজলিস’ নামে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তমুদ্দুন মজলিসের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন তরুণ অধ্যাপক আবুল কাশেম। আর সেই ভাষা আন্দোলনের প্রভাব বাংলার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিটা পরতে পরতে প্রত্যক্ষ করা যায়। যার সার্থক ফসল আজকের এ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।’

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

© 2024, All rights reserved. এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। এখানে নিজস্ব সংবাদ প্রচার সহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ সুত্র সহ প্রকাশ করা হয়। অনুগ্রহ পূর্বক কেহ অভিযোগ করিবেন না। তাছাড়াও কোন অভিযোগ থাকলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট
error: এখানে নিজস্ব সংবাদ প্রচার সহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ সুত্র সহ প্রকাশ করা হয়। অনুগ্রহ পূর্বক কেহ অভিযোগ করিবেন না। তাছাড়াও কোন অভিযোগ থাকলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।