মো: গোলাম কিবরিয়া
রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীতে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী ‘মিষ্টি পান’ অচিরেই ভৌগোলিক নির্দেশক (Geographical Indication – GI) পণ্যের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র ইতোমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
জেলা প্রশাসক বলেন, “‘রাজশাহীর মিষ্টি পান’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। আমরা দুই মাস আগে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন করেছি। দু-এক দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ হলেই আমরা নিশ্চিত হতে পারব।”
তিনি আরও জানান, রাজশাহীর পান শুধু কৃষির অংশ নয়, এটি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রেশম ও আমের পাশাপাশি পানও এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। জিআই সনদ পেলে রাজশাহীর পান আন্তর্জাতিক বাজারেও পরিচিতি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অর্থকরী ফসল হিসেবে পানের গুরুত্ব
স্থানীয়ভাবে পানকে ‘ক্যাশ ক্রপ’ এবং বরজকে ‘ক্যাশ ব্যাংক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কৃষকরা যখন অর্থকষ্টে পড়েন, তখন বরজ থেকে পান তুলে হাটে বিক্রি করেই দ্রুত আয় করতে পারেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এক বিঘার একটি পানের বরজ থেকে প্রতি মাসে একজন কৃষক গড়ে ৩৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। যদিও প্রতি বিঘা বরজ তৈরিতে এককালীন খরচ পড়ে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা, তবে একবার বরজ তৈরি হলে তার স্থায়িত্ব ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
উৎপাদনে বিপ্লব
বর্তমানে রাজশাহী জেলায় পানের চাষে নিয়োজিত কৃষকের সংখ্যা ৩৯ হাজার ১০১ জন। ২০১৮ সালে যেখানে আবাদ হতো আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার ২১৯ টন পান।
জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে বাগমারা, পবা, মোহনপুর ও দুর্গাপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পানের চাষ হয়। বর্তমানে জেলায় ৩৯ হাজার ৮৭৬টি পান বরজ রয়েছে। এসব বরজের পান জেলার ২০টি হাটে সরাসরি বিক্রি করে থাকেন কৃষকরা।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, “জিআই সনদ পেলে পান উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে, যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। ইতিমধ্যে চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, সামনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।”