মো: গোলাম কিবরিয়া
রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীর পবা উপজেলায় স্থাপিত বিসিক শিল্পপার্ক-২ (বেসিক প্রকল্প-২) কার্যত সফলতার মুখ দেখেনি। তিন বছর আগে এ প্রকল্প উদ্বোধনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্পায়নের নতুন দুয়ার খোলা হলেও, বাস্তবে তা তেমনটি হয়নি। অতিরিক্ত প্লট মূল্য, ইউটিলিটি সেবার অভাব এবং ব্যাংকিং সহায়তা না থাকায় বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা।
২০২২ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া এ প্রকল্পটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন ৫০ একর জমির ওপর স্থাপিত। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ শিল্পপার্কে মোট ২৮৬টি শিল্প প্লট রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটানোর কথা ছিল। তবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রকল্পে মাত্র ৪৯টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও, শিল্প কার্যক্রম শুরু হয়েছে মাত্র তিনটি প্লটে। বাকি অধিকাংশ প্লটই ফাঁকা পড়ে আছে, কোথাও কোথাও গজিয়ে উঠেছে কাশবন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রধান ফটক পেরিয়েই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ধারিত প্লটগুলোও কার্যত অচল। সামান্য এগোতেই চোখে পড়ে সারি সারি কাশবন আর ফুল ফোটা নির্জন প্লট। কোথাও নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্লট কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, অথচ এখানে নেই কোনো কমন ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট)। ফলে ভবিষ্যতে এসব শিল্প থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহীর খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান উষা সিল্ক প্রিন্টিং ও উইভিং ফ্যাক্টরি ২০২৪ সালে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রকল্পের শুরুতে আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু বাস্তবতা আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি। তাই আমরা আর আগাইনি।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রকল্পটিকে সফল করতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন, সেবার মান বৃদ্ধি ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বিসিক প্রকল্প-২ কেবল একটি ব্যর্থ উন্নয়ন পরিকল্পনা হিসেবেই থেকে যাবে।