হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক প্রতিনিধি, দৈনিক সংবাদ ৭১ ডিজিটাল ডেক্স
২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়রপ্রার্থী হিসেবে প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রান্ট জোহরান মামদানি মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ধনীদের মাঝে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। তার পুঁজিবাদবিরোধী ও দরিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক নীতির কারণে একে অনেকেই ‘নিউইয়র্ক থেকে বিলিয়নিয়ারদের পালানোর’ সূচনা হিসেবে দেখছেন।
৩৩ বছর বয়সী মামদানি প্রাইমারিতে জয়ী হওয়ার পর ঘোষণা দেন—তিনি নির্বাচিত হলে শহরের এক মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা বাসিন্দাদের অতিরিক্ত ২% কর দিতে হবে। একইসঙ্গে কম আয়ের মানুষের জন্য থাকবে সরকারি আবাসন সুবিধা ও জীবনযাত্রা খরচ কমানোর উদ্যোগ।
এই ঘোষণার পর অর্থনীতি বিষয়ক মিডিয়া যেমন—ফরচুন, সিএনবিসি, ফক্স বিজনেস, এমনকি নিউইয়র্ক টাইমস ও নিউইয়র্ক পোস্ট পর্যন্ত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে।
নিউইয়র্কের আবাসন ব্যবসায়ী জে বাতরা জানান, তার কয়েকজন বিলিয়নিয়ার ক্লায়েন্ট ম্যানহ্যাটনে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগ্রহ হারাচ্ছেন জোহরানের প্রার্থীতা ঘিরে উদ্বেগে। সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, “নিউইয়র্কের বিলাসবহুল আবাসন খাতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষ করে আপার ইস্ট সাইড অঞ্চলে।”
ফ্লোরিডার রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, নিউইয়র্ক থেকে তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট ৫০% বেড়ে গেছে। ওয়ান সদেবিস ইন্টারন্যাশনাল রিয়েলটি-এর প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ডে লা ভেগা বলেন, “আমাদের গ্রাহকরা এখন নিউইয়র্কের ট্যাক্সনীতি, নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিয়ে চিন্তিত।”
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১.২৫ লাখ ধনী নিউইয়র্কবাসী ফ্লোরিডায় চলে গেছেন, সঙ্গে নিয়ে গেছেন আনুমানিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জোহরান জিতলে ‘ট্যাক্সোডাস’-এর দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে।
সিএনবিসি’র ভাষ্যমতে, জোহরানের প্রার্থিতা নিউইয়র্কের বিলাসবহুল আবাসন শিল্পে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ধনী ব্যক্তি এখন শহর ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আরএক্সআর রিয়েলিটি–এর প্রধান নির্বাহী স্কট রেশলার বলেন, “নিউইয়র্ক হচ্ছে পুঁজিবাদের রাজধানী। এখানে সমাজতান্ত্রিক নীতির মেয়র গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “গভর্নরের সমর্থন ছাড়া জোহরান কিছু করতে পারবেন না—এটা নিশ্চিত করা দরকার।”
অন্যদিকে, ডগলাস এলিমান রিয়েলটি-এর লিওনার্ড স্টেইনবার্গ বলেন, “যে মেয়র আমাদের বাদ দিয়ে কাজ করবেন, তিনি আমাদের মেয়র নন।”
তবে কিছু ব্যবসায়ী যেমন স্টিভেন কোহেন মনে করেন, “জোহরান জিতলেও সবাই একযোগে শহর ছেড়ে চলে যাবেন না। তবে উদ্বেগ আছে।”
জোহরান মামদানির ‘ধনীবিরোধী’ বক্তব্য তাকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থেকে শুরু করে রিপাবলিকান নেতারা। এনবিসির এক সাক্ষাৎকারে জোহরান বলেন, “আমি কমিউনিস্ট নই। তবে আমি মনে করি না, একজন মানুষের বিলিয়নিয়ার হওয়া উচিত।”
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং শিক্ষাবিদরা বলছেন, জোহরানের নীতিমালা তাঁকে কমিউনিস্ট প্রমাণ করে না। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্ক–এর শিক্ষকদের মতে, তাকে ‘কমিউনিস্ট’ বলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
জোহরান চাইছেন, গ্রোসারি, ভাড়া এবং গণপরিবহনের খরচ কমানো হোক। তার প্রচারণা বলছে, “নিউইয়র্কে দরিদ্র মানুষদের থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।” তার সমর্থকরা পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি খরচে গ্রোসারি দোকান চালুর প্রস্তাব দিচ্ছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানি নির্বাচনে বিজয়ী হলে নিউইয়র্ক শহরের অর্থনৈতিক চেহারায় বড় পরিবর্তন আসবে—এটাই বিশ্বাস করছেন অনেক অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী। তবে এই পরিবর্তন হবে ইতিবাচক না নেতিবাচক, তা সময়ই বলে দেবে।
সংবাদদাতা:
হাকিকুল ইসলাম খোকন
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
দৈনিক সংবাদ ৭১ ডিজিটাল ডেক্স