আজীজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার
দৈনিক সংবাদ ৭১
বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে সরকারি উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১% আয়কর খাত থেকে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের মধ্যে প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা এককভাবে একটি মন্দিরে তিনটি প্রকল্প দেখিয়ে ব্যয় দেখানো হয়েছে, যা নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের ৯০-৯৫% জনসংখ্যা মুসলিম হলেও, বরাদ্দে কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা বা মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। অথচ একটি হিন্দু মন্দিরে একসঙ্গে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়াকে বৈষম্যমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউনিয়নের সিংগাতী গ্রামে অবস্থিত শীতলা মন্দিরে গিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রকল্পের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি। মন্দির পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা ও সহ-সভাপতিরা জানান, তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুধু ১ লাখ টাকার বালু ভরাট অনুদান পেয়েছেন, বাকি কাজ স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে সম্পন্ন করা হয়েছে।
সেখানে সরকারি প্রকল্পের সাইনবোর্ড নেই, নেই সময়কাল বা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানের কোনো প্রমাণ। কেউ কেউ জানান, “গতকালই তো ছাদ ঢালাই হয়েছে!” অথচ ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, “আমি ছাদ ঢালাইয়ের বিষয়ে কিছু জানি না।”
৮নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন, তিনি প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, অথচ তার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ‘সুপারভিশন কমিটির সদস্য’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাস্তবে তাকে কোনো বৈঠকে ডাকা হয়নি, জানানো হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়নের কিছুই।
শুধু চলতি বছরেরই নয়, ২০১৬-১৭ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৭ লাখ টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স ব্যয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে বহু বছর ধরে তদন্ত চলছে, তবু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ইউনিয়নের সাবেক সচিব আশীষ ব্যানার্জির বিরুদ্ধেও রয়েছে সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি, বিভিন্ন ইউনিয়নে চাকরি করার সময় তিনি জমি কিনেছেন, ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়িয়েছেন, যার উৎস প্রশ্নবিদ্ধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার অন্য ৭টি ইউনিয়নে বাজেট বণ্টন সীমিত হলেও, শুধু ফকিরহাট সদর ইউনিয়নেই পুরো বরাদ্দ মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে শেষ দেখানো হয়েছে। আর এই ব্যয়ের সিংহভাগই গেছে একটি মন্দির প্রকল্পে, যা জনমনে ক্ষোভ ও দুর্নীতির আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
এই প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে প্রকল্প রেজিস্টার খাতা, বিল-ভাউচার, মাঠ পর্যায়ের ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এসব প্রমাণ ও আরও নতুন তথ্যসহ পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে।
এই প্রশ্ন কেবল একজন সাংবাদিকের নয়—এটি আমাদের সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের। জনগণের টাকায় গড়ে ওঠা প্রকল্পে যদি এইভাবে দুর্নীতি হয়, তাহলে জবাবদিহিতা কোথায়? তাই সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর।
সত্য প্রকাশ হোক, দুর্নীতির অবসান হোক।