সহায়তার লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় নিহত ৩৪ ফিলিস্তিনি, ইউনিসেফের আশঙ্কা: শিশুরা মরছে পিপাসায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | মো: রায়হান হোসেন | দৈনিক সংবাদ ৭১
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলায় শুক্রবার (২০ জুন) আরও অন্তত ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ছিলেন খাদ্য সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ গাজার বিভিন্ন সহায়তা কেন্দ্রের আশেপাশে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দেইর আল-বালাহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলে এক বাসভবনে চালানো বিমান হামলায় হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শুধু মধ্য গাজাতেই প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩৭ জন।
এর মধ্যে ২৩ জন ছিলেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ দরিদ্র নাগরিক। গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন আরও ২৩ জন এবং দক্ষিণাঞ্চলে নিহত ২২ জনের মধ্যে ১১ জনই সহায়তা প্রত্যাশী ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের মহাপরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০৯ জন সহায়তা প্রত্যাশী নিহত এবং আরও ৩,২০৩ জন আহত হয়েছেন।
গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকটের বিষয়ে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, অঞ্চলটি এখন ‘মানবসৃষ্ট খরার’ সম্মুখীন। জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার জানান, পানি পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শিশুরা পিপাসায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, “মাত্র ৪০ শতাংশ পানি উৎপাদন সুবিধা সচল রয়েছে। আমি এমন অনেক মায়ের কথা শুনেছি যারা সন্তানকে খাবারের লাইনে পাঠিয়েছিলেন, আর সে ফিরেছে রক্তাক্ত অবস্থায়।”
একটি ঘটনায় এক কিশোর একটি ট্যাংকের গোলায় আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যায় বলেও জানান তিনি।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা একে “ব্যর্থ” ও “বিপজ্জনক” আখ্যা দিয়ে বলছে, এই ব্যবস্থার কারণে গাজার মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
বিভ্রান্তিকর তথ্য, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা ও অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থাও এই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউনিসেফ মুখপাত্র জানান, “অনেক সময় ঘোষণা দেওয়া হয় যে কেন্দ্র খোলা, কিন্তু পরে জানা যায় তা বন্ধ। ফলে অসংখ্য মানুষ ভুল তথ্যের কারণে হামলার মুখে পড়ে।”
এর মধ্যে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বুধবার দাবি করেছে, তারা তিনটি বিতরণ কেন্দ্রে ৩০ লাখ খাবার বিতরণ করেছে “ঘটনাবিহীনভাবে”। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এই দাবির কোনো মিল নেই।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান শুক্রবার ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (OIC) যুব ফোরামে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, “গাজায় গণহত্যা এবং ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষ ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে। এই উন্মত্ততা এখনই থামানো উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরাইল একদিকে বলে হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অথচ তারাই গাজায় ইতোমধ্যে ৭০০টিরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ধ্বংস করেছে। এটি এক ভয়ংকর দ্বিমুখী নীতি।”
গাজায় বর্তমানে খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সহায়তা নিতে এসে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরাইলি হামলা থামার কোনো ইঙ্গিত নেই।