ফকিরহাটে ঈদ উপলক্ষে চাউল বিতরণে স্বচ্ছতা, স্লিপ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

আজীজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার, বাগেরহাট

বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ভিজিএফ (VGF) কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত চাউল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১,২৫৩ জন উপকারভোগীর মধ্যে প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়েছে। এই হিসাবে মোট বিতরণকৃত চাউলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২,৫৩০ কেজি। তবে চাউল বিতরণের মূল কার্যক্রমে তেমন কোনো অনিয়ম দেখা না গেলেও, বিতরণে ব্যবহৃত ‘স্লিপ’ বা কুপন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, সরকারি বরাদ্দ সঠিকভাবে বণ্টনের কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। তারা বলেন, প্রকৃত দরিদ্র পরিবারগুলোর একটি বড় অংশ এই বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে, কিছু প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা ও ব্যক্তিবিশেষ তাদের ঘনিষ্ঠজনদের তালিকাভুক্ত করে চাউল প্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকি এমন পরিবারও রয়েছে যারা পূর্বে ১৫০ কেজি পর্যন্ত চাউল পেয়েছে, অথচ তারাই আবার ঈদের বরাদ্দকৃত চাউলও গ্রহণ করেছে। এই ধরনের অনিয়মের ফলে প্রকৃত দরিদ্র ও অসহায় মানুষরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মুহাম্মাদ এফসাল হাসান বলেন, “সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভিজিএফ চাউল বিতরণ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। আমরা যথাসম্ভব নিয়ম মেনে বিতরণ করেছি। যেসব ওয়ার্ডে ইউপি সদস্যরা সরাসরি উপস্থিত থেকে বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, সেখানে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে যেসব ওয়ার্ডে ইউপি সদস্যরা নিজে না থেকে অন্য কাউকে দিয়ে স্লিপ বিতরণ করিয়েছেন, সেখানে কিছু অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে।”

অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য জানিয়েছেন, ইউনিয়নের অনেক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় না। তারা বলেন, “আমরা মাসিক সম্মানী পেলেও অনেক কার্যক্রমে আমাদের সম্পৃক্ত করা হয় না। বিতরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে চাইলেও আমাদের বাদ দেওয়া হয়, যা খুবই হতাশাজনক।”

ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী ও পুরুষ জানান, তারা কখনোই নিয়মিত ভিজিডি বা ভিজিএফ কার্ড পান না। বিশেষ কোনো উৎসবে মাঝে মাঝে কিছু বরাদ্দ আসলেও, সেটাও সবার মাঝে সমভাবে পৌঁছায় না। “আমরা দিনমজুর, কাজ নেই বললেই চলে। ঈদের সময়টাতে একমুঠো চাউল খুব প্রয়োজন, কিন্তু তা পেতেও অনিয়মের শিকার হতে হচ্ছে,”—বলেন এক নারী ভুক্তভোগী।

স্থানীয় সচেতন মহল ও সাধারণ জনগণের দাবি, ঈদসহ যেকোনো সময়ের ত্রাণ বা সরকারি সহায়তা বিতরণে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য দরকার একটি নিরপেক্ষ ও সঠিক তালিকা প্রণয়ন এবং বিতরণ কার্যক্রমে ইউপি সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে কঠোর নজরদারি ও তদারকিও থাকা প্রয়োজন, যাতে কোনো পক্ষই অনৈতিক সুযোগ নিতে না পারে।

ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের এ অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রত্যাশা করছে এলাকাবাসী।