1. dailysonbad@gmail.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. newsroom@dailysongbad71.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
যশোরের চৌগাছা স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার | দৈনিক সংবাদ ৭১
বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে বাগেরহাটে জামায়াতের গণজমায়েত ও মিছিলে জনতার ঢল সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত দুমকিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ফরিদপুরে শহীদ জান শরীফ মিঠুর সমাধিতে পুষ্পমালা অর্পণ ফুলতলায় একই মঞ্চে বিএনপি ও জামায়াতের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপন শ্রীবরদীতে জামায়াতে ইসলামী’র পথসভা ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত বাগেরহাটে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫” উদযাপন: হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বিজয় র‍্যালি ও আলোচনা সভা ফ্যাসিবাদবিরোধী বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে তজুমদ্দিনে বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে শ্রীবরদীতে বিএনপির বর্ণাঢ্য বিজয় র‍্যালি গণঅভ্যুত্থানে সাহসী সাংবাদিকতার জন্য সম্মাননা পেলেন সুনামগঞ্জের সাংবাদিক আল হেলাল ইকবাল মাহমুদ

যশোরের চৌগাছা স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার

সম্পাদকীয়
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর জেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা চৌগাছা ছিল পাক হানাদার বাহিনীর অন্যতম ঘাঁটি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা স্বাধীন করতে প্রাণপণ লড়াই করেন। বিচ্ছিন্নভাবে পাক সেনাদের সাথে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয় চৌগাছার বিভিন্ন এলাকায়। ৮নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নেন জগন্নাথপুর (বর্তমান মুক্তিনগর) আমবাগান এলাকায়। আর যশোরের রণাঙ্গনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি সংঘটিত হয় চৌগাছার জগন্নাথপুর ও মসিয়ূর নগরে। ১৯৭১ সালের ২০শে নভেম্বর মুক্তি ও ভারতীয় বাহিনীর উভচর ট্যাংকগুলো বয়রা সীমান্তের কপোতাক্ষনদ পার হয়ে যশোর সেনানিবাস দখলের অভিযান শুরু করে। ঝিকরগাছার ছুটিপুর থেকে মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস লক্ষ্য করে কামানের গোলা নিক্ষেপ শুরু করে। সেনানিবাসকে অবরুদ্ধ করতে বয়রা-কাবিলপুর ও গরিবপুর হয়ে এগোতে থাকে ট্যাংকবাহিনী।

এদিন ছিল ঈদের দিন। সকালে চৌগাছার জগন্নাথপুরের মানুষ তৈরি হচ্ছিল ঈদ উদযাপনের জন্য। এমনই এক সময় হানাদার পাকবাহিনীর ২০-২৫টি গাড়ি ঢুকে পড়ে জগন্নাথপুর (বর্তমানে মুক্তিনগর) গ্রামে। ঈদের দিন মানুষ নামাজ পড়বে, মিষ্টিমুখ করবে, এটাই হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাখির মত লুটিয়ে পড়েছে মানুষ। রাতে বড় ধরনের যুদ্ধ হয়, নীরব নিস্তব্ধ জগন্নাথপুর গ্রাম প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোলাগুলির শব্দে। চলে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। ছোট সিংহঝুলি (বর্তমান মসিয়ূর নগর) সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামও পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে।

গরিবপুর গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মাশিলা স্কুলের সাবেক সহকারী শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫৭ জন সাধারণ জনগন মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে ১৯  গ্রামের নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষের নাম জানা গেছে। রণাঙ্গনে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে স্মৃতিফলকে উল্লিখিত নামগুলো হল— শহীদ সুজাউদ্দৌলা বীর মুক্তিযোদ্ধা, আসাদুজ্জামান মধু, আব্দুর রাজ্জাক, আবুল হোসেন, রেজাউল ইসলাম, মহিউদ্দিন দেওয়ান, মুন্সি কপিল উদ্দিন, বিশু মণ্ডল, খোকা বারিক, আলতাপ হোসেন, জহির উদ্দিন, হাসান আলী, তাহের আলী, করিমন নেছা, রহিমা খাতুন, ভানু বিবি, ছইরন নেছা, আয়শা আক্তার।

২১শে নভেম্বর স্থানীয় জগন্নাথপুর গ্রামে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর মধ্যে এক বিশাল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দের সঙ্গে হাজারো সৈন্যের গগণবিদারী চিৎকার। দীর্ঘসময় ধরে যুদ্ধ চলায় গোলা-গুলি যখন শেষের দিকে, এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ চলে আসে কাছাকাছি, একশ গজের মধ্যে। জগন্নাথপুর আমবাগানে (বর্তমান স্কুল মাঠ) শুরু হয় হাতাহাতি, মল্লযুদ্ধ! সরাসরি রাইফেলের বেয়নেট ও বাট দিয়ে মারামারির এক পর্যায়ে খালি হাতেই লড়াই  চলতে থাকে। রক্তাক্ত হয় আম্রকানন মাঠ।

এ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্র বাহিনী ও পাক বাহিনীর মধ্যকার চলমান যুদ্ধে গোলাবারুদ শেষ হলে উভয়েই মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধটি ছিল অত্যান্ত ভয়াবহ। আমার জানামতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ইতিহাসে মল্লযুদ্ধ কোথাও হয়নি।’

যশোরের চৌগাছায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানের একটি স্মৃতিফলকযশোরের চৌগাছায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানের একটি স্মৃতিফলক

২২ নভেম্বর আবারও বিমান হামলা চালায় পাকবাহিনী। মিত্রবাহিনীও পাল্টা বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের দুটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করে, একটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ধ্বংস করে আরও ৭টি ট্যাংক ও বহু সাঁজোয়া গাড়ি। পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকবাহিনী। মিত্রবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গাড়ে জগন্নাথপুরে। এ যুদ্ধে দু’পক্ষের সহস্রাধিক সৈনিক মারা যায়। মুক্তিবাহিনী এরপর মিত্রবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হামলার পর হামলা চালাতে থাকে। এগিয়ে যেতে থাকে যশোরের অভিমুখে। পাক সেনারা সলুয়া বাজারে ঘাঁটি করে ওখান থেকে যুদ্ধ করতে থাকে। এক সময় ওই ঘাঁটিও ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ইতিহাসে এটি জগন্নাথপুরের যুদ্ধ নামে খ্যাত।

যেহেতু তুমুল যুদ্ধে ইতোমধ্যে পাক বাহিনীর চৌগাছার ঘাঁটি দখল করে নেয় যৌথবাহিনী, হানাদার মুক্ত হয় চৌগাছা, তাই ২২শে নভেম্বর দেশের প্রথম মুক্ত অঞ্চল হিসেবে চৌগাছাকে ‘স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার’ বলেন অনেকেই। এলাকাবাসী ২২শে নভেম্বরকে স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার চৌগাছা মুক্ত দিবস হিসাবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। এ তিন দিন যশোর অঞ্চলের আড়পাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে টিকতে না পেরে যশোর সেনানিবাস থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাকসেনারা। ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। তাই ৬ ডিসেম্বরকে বলা হয় যশোর মুক্ত দিবস। যশোরের মাটিতে সেদিন উড়ানো হয় বিজয়ের প্রথম পতাকা। মানুষের গগনবিদারী ‘জয়বাংলা স্লোগান’ প্রকম্পিত করে আকাশ-বাতাস। হাজার-হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে মুক্তির আনন্দে।

স্বাধীনতার পরেও এখানে ২টি ট্যাংক পড়েছিল বহুদিন ধরে। একটি ট্যাংক আগুনে পোড়া, আর একটি চেন কাটা ছিল। ১৯৭৬ সালে ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর যশোর জেলার জেলা প্রশাসক হয়ে আসার পর তিনি ট্যাংক দুটি দেখতে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে ৬ ডিসেম্বর  এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে কবি শামসুর রহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি স্মৃতিফলকে স্থাপন করেন। উল্লেখ্য কবি শামসুর রহমানও ১৯৮০ সালে এখানে আসেন। ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর ১৯৭৯ সালে জগন্নাথপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিনগর’ রাখেন এবং নিজ উদ্যোগে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মুক্তিনগর শহীদ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮৭ সালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি স্বীকৃতি পায় ও এম.পি.ও ভুক্ত হয়। এরপর জগন্নাথপুর গ্রামের আম্রকানন (মুক্তিনগর) পরিদর্শনে আসেন ভারতীয় সেনা প্রধান শংকর রায় চৌধুরী। তিনি এ এলাকায় ১৯৭১ সালে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। সেই আম্রকাননের বড় বড় আমগাছ এখন আর নেই। এখানে নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার স্মৃতিফলক, স্মৃতিসৌধ, ও মুক্তিনগর শহীদ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।  মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই লক্ষাধিক বীরাঙ্গনা ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© 2024, All rights reserved. এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। এখানে নিজস্ব সংবাদ প্রচার সহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ সুত্র সহ প্রকাশ করা হয়। অনুগ্রহ পূর্বক কেহ অভিযোগ করিবেন না। তাছাড়াও কোন অভিযোগ থাকলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট
error: এখানে নিজস্ব সংবাদ প্রচার সহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ সুত্র সহ প্রকাশ করা হয়। অনুগ্রহ পূর্বক কেহ অভিযোগ করিবেন না। তাছাড়াও কোন অভিযোগ থাকলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।