শ্রীবরদীতে বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত্বা নারী—তবুও ধরা ছোঁয়ার বাইরে আসামি
শফিউল আলম শফিক, শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বিলভরট গ্রামে প্রেমের প্রলোভনে ফেলে এক তালাকপ্রাপ্ত নারীকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের দুবু মিয়ার ছেলে মো. জহুরুল হকের (২৯) বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই নারী ৩১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। আদালতে মামলা দায়েরের পরও আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় ভুক্তভোগীর পরিবার চরম হতাশা ও লজ্জার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
ভুক্তভোগী জানান, জহুরুল প্রথমে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে একইভাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিয়ের জন্য চাপ দিলে জহুরুল স্পষ্টভাবে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং গালিগালাজসহ খুন-জখমের হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় নারীটি শেরপুর জেলা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগ দায়ের করলে আদালত মামলা আমলে নিয়ে শ্রীবরদী থানাকে এফআইআর দায়ের ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। তবে কয়েক মাস পার হলেও আসামি এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
ভুক্তভোগীর বাবা মো. ধলু মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেল। এখন পেটে সন্তান। আমরা থানায় গেলাম, তারা কোর্টে যেতে বলল। কোর্টে মামলা করলাম, কিন্তু এখনো পুলিশ আসামিকে ধরছে না। সমাজে মাথা তুলে চলতে পারি না। দ্রুত ন্যায়বিচার চাই, যাতে কেউ আমার নাতিকে ‘জারজ’ বলতে না পারে।”
ভুক্তভোগীর ভাই মো. শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, “জহুরুল যেমন খারাপ, তেমনি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আমরা গরিব বলে কি ন্যায়বিচার পাব না? সরকারের কাছে অনুরোধ, আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আমাদের সম্মান ফিরিয়ে দিন।”
বিলভরট গ্রামের বাসিন্দা হায়বর বলেন, “এ ধরনের ঘটনা মানবতার জন্য লজ্জাজনক। এক তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে দিনের পর দিন শোষণ করে, গর্ভবতী করে, পরে বিয়ে অস্বীকার—এটা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। ন্যায়বিচার না পেলে সমাজে কেউই নিরাপদ থাকবে না।”
স্থানীয় আরেক প্রতিবেশী বলেন, “জহুরুল শুরু থেকেই পরিকল্পিতভাবে মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলেছে। এখন ন্যায়বিচার না হলে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে। পুলিশকে দেরি না করে আসামিকে ধরতে হবে।”
অন্যদিকে, কাঁদতে কাঁদতে ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই। আমি জানতাম না সে প্রতারক। এখন মা হতে যাচ্ছি, কিন্তু সন্তানের স্বীকৃতি থাকবে না—এটা আমি মেনে নিতে পারি না।”
এ বিষয়ে শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার জাহিদ বলেন, “আমরা বিষয়টি অবগত আছি এবং আসামিকে ধরতে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে।”