পটুয়াখালী ভার্সিটিতে ৮২% পদে বিএনপিপন্থি শিক্ষকের দখল, ‘জামাতিকরণ’ অভিযোগ
জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকি ও পবিপ্রবি প্রতিনিধি
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) ক্রমেই বাড়ছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের প্রভাব—এমন অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ২৮টি প্রশাসনিক ও একাডেমিক পদের মধ্যে ২৩টি পদে বিএনপিপন্থি শিক্ষক এবং বাকি ৫টি পদে জামায়াতপন্থি শিক্ষক রয়েছেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও রিজেন্ট বোর্ড সদস্যের পদে যথাক্রমে অধ্যাপক ড. সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার এবং অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ নিয়ে সহকারী অধ্যাপক এবিএম সাইফুল ইসলাম ছাত্রবিষয়ক উপ-উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি নিজেকে বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করে অভিযোগ করেন, তাঁর সিনিয়রিটি উপেক্ষা করে প্রশাসন ‘জামাতিকরণ’ করছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, অধ্যাপক ড. সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার গ্রেড-২ এর অধ্যাপক এবং বিদেশ থেকে পিএইচডি ও পোস্ট-ডক ডিগ্রিধারী, অন্যদিকে এবিএম সাইফুল ইসলাম গ্রেড-৪ এর সহযোগী অধ্যাপক এবং দেশের ভেতরে পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
জামাতিকরণের অভিযোগ প্রসঙ্গে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ শতাংশ পদ বিএনপিপন্থিদের দখলে, বাকিগুলো জামায়াতপন্থিদের। এদিকে, নারী কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও হত্যা মামলার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেবল ইউট্যাবের পবিপ্রবি ইউনিটের সভাপতির পদে থাকার কারণে অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদকে রিজেন্ট বোর্ডে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী হুসাইন আল মামুন বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষকদের এমন দখলদারিত্ব মনোভাব আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। শিক্ষা ও গবেষণার পরিবর্তে পদ দখলই যেন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সাবেক শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, “পদায়নে রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। প্রশাসনের উচিত এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষকদের পদায়ন করেছি। কারও স্বার্থে এমন অভিযোগ দুঃখজনক এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যদি কেউ এই ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে, সরকারি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে বিতর্কিত অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদকে কেন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য করা হয়েছে—এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।