প্রভাষক জাহিদ হাসান
দৈনিক সংবাদ ৭১ ডিজিটাল ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করতে চাইলে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে কোনো বাধা দেবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না। তাঁর কথায়, ‘এটা মূলত ইসরায়েলের বিষয়। আমি এখন গাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে বেশি মনোযোগী।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় নজিরবিহীন ও নৃশংস সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে প্রতিবছর দেওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা আরও বাড়িয়েছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যে গাজার অধিকাংশ অংশকে সামরিক এলাকা ঘোষণা করে ফিলিস্তিনিদের সীমিত জায়গায় জোরপূর্বক গাদাগাদি করে রেখেছে। ফলে উপত্যকার প্রায় ৮৬ শতাংশ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।
অবশিষ্ট যেসব এলাকায় এখনো অভিযান চালানো হয়নি, সেগুলোতেও ইসরায়েলি সামরিক তৎপরতা শুরু হলে মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হতে পারে। প্রতিদিনের বোমা হামলা ও অবরোধের কারণে গাজার জনগণ বর্তমানে চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে।
জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনচা সতর্ক করে বলেন, গাজা দখলের সিদ্ধান্ত “ফিলিস্তিনিদের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি” ডেকে আনবে। নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্যে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গাজা ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আন্তর্জাতিক আইনে তা সুরক্ষিত।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও বসতি তুলে নেয়। তবে আকাশপথ, উপকূলীয় জলসীমা ও প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ করায় এটি তখনও কার্যত দখলাধীন ছিল বলে মত দেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে উগ্রপন্থী ইসরায়েলি নেতারা গাজায় বসতি গড়ার দাবি করে আসছেন। সম্প্রতি নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইসরায়েল গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দিতে চায়।”
এই বক্তব্যকে “জাতিগত নিধনের পরিকল্পনা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এই পরিকল্পনার পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি বলেছিলেন, গাজা খালি করে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” বা সৈকতের আধুনিক অবকাশ কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। এখন গাজায় খাদ্যের একমাত্র উৎস হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত কিছু বিতরণ কেন্দ্র। তবে বিতর্কিত এই সংস্থার সহায়তা কেন্দ্রগুলোর দিকেও খাবার নিতে গিয়ে বহু ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘকে সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে বিশ্বজুড়ে চাপ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো তার মিত্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
প্রকাশিত: দৈনিক সংবাদ ৭১ | তারিখ: ৬ আগস্ট ২০২৫