মো: গোলাম কিবরিয়া
জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী
রাজশাহীর বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক বালাইনাশক ওষুধ। এসব বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহারের ফলে কৃষকসহ সাধারণ ব্যবহারকারীরা পড়ছেন সরাসরি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন গবেষক ও পরিবেশবাদীরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত এক অনুসন্ধানমূলক মাঠসমীক্ষায় এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। "জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব" শীর্ষক এই গবেষণাটি রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামে পরিচালিত হয়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৬৮ শতাংশ ব্যবহারকারী। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো—৯৩.৩৭ শতাংশ ব্যবহারকারী জানেনই না তারা যে কীটনাশক ব্যবহার করছেন তা নিষিদ্ধ এবং মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
গবেষণায় উঠে এসেছে, অধিকাংশ দোকানে নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে মোড়ক পরিবর্তন করে। ফলে সাধারণ কৃষক ও ক্রেতারা বুঝতেই পারছেন না ওষুধটি নিষিদ্ধ কি না। গবেষণা অনুযায়ী, এসব দোকানের ৯৯ শতাংশেই নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত পণ্য।
সমীক্ষায় দেশ-বিদেশে নিষিদ্ধ এমন বেশ কয়েকটি কীটনাশকের নামও প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
জিরো হার্ব-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বারাইল), এরোক্সান-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান-৩ জিএসআই (কার্বোফোরান), ইঁদুর মারার বিষ (ব্রোডিফ্যাকোয়াম), তালাফ-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো প্যারাকোয়াট। এটি আগাছা দমনে ব্যবহৃত হলেও মানবদেহে প্রবেশ করলে কিডনি বিকল-সহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আত্মহত্যার ক্ষেত্রেও এই বিষ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে বলে জানান তারা।
রাজশাহীর একটি রেঁস্তোরায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারের ফলে শুধু কৃষক নয়, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে।”
বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, “আমি নিজেই রাজশাহীর বিভিন্ন দোকান থেকে বেশকিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক কিনেছি এবং তার রসিদও আমার কাছে রয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”
তিনি আরও বলেন, “কীটনাশক বিক্রয় ও ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, কীটনাশক-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকি রেজিস্ট্রার চালু এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের এখনই সময়।”
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বারসিকের গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”