নেত্রকোনায় কুরআন অবমাননার মামলার পর আসামিদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট
এম আলী আকবর, ব্যুরো চিফ
নেত্রকোনা: নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায় কুরআন অবমাননার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গ্যাইরা চন্দ্রপুর বাজারে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত আল্লাহর জিকির করতেন। গত ১৩ জুলাই তিনি হঠাৎ একটি দোকানে থাকা পবিত্র কুরআন শরীফ মাটিতে ফেলে লাথি মারেন। ঘটনাটি বাজারে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর ১৪ জুলাই জীবনপুর গ্রামের মাওলানা তরিকুল ইসলাম বারহাট্টা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কুরআন অবমাননার অভিযোগে একটি মামলা রুজু হয় এবং পুলিশ অভিযানে গিয়ে নাজমা আক্তার নামের এক নারীকে গ্রেফতার করে।
এরপর ১৬ জুলাই চন্দ্রপুর বাজারে বিক্ষোভ চলাকালে একদল উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তদের বাড়ি ও দোকানে হামলা চালায়। এতে হাবিবুর রহমানের দোকানসহ নাজমা আক্তার ও আরও কয়েকজনের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী নাজমা আক্তার বলেন, “আমরা কেবল যিকির শুনতে গিয়েছিলাম। কুরআন অবমাননার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাদের জড়িয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে আমাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।”
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ ধরনের সংবেদনশীল ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট নিন্দনীয়।”
মামলার বাদী মাওলানা তরিকুল ইসলাম বলেন, “একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির হাতে কুরআন শরীফ তুলে দেওয়া অনুচিত ছিল। কিছু তরুণ আবেগপ্রবণ হয়ে এই ঘটনায় অংশ নিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের সুযোগ নেই।”
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পর মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অতিউৎসাহী কিছু ব্যক্তি হামলা ও লুটপাটে অংশ নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।”