আজিজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার, দৈনিক সংবাদ ৭১
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৎস্য চাষের অন্যতম প্রধান এলাকা বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় চাষিরা এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে। একদিকে ভাইরাস সংক্রমণ, অন্যদিকে টানা বর্ষণ, অস্বাভাবিক জোয়ার ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে উপজেলার অধিকাংশ মাছের ঘের, পুকুর ও নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় চাষিদের দাবি, এতে তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
ফকিরহাটের ভৈরব, চিত্রা ও কালীগঙ্গা নদী তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চাষিরা আইল বাঁধ মেরামত ও জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু জোয়ারের তোড়ে ছোট-বড় নানা জাতের মাছ ভেসে যাচ্ছে নদী, খাল ও উন্মুক্ত স্থানে। অনেকে ঘরের উঠোন, রাস্তা ও পাশের খালে মাছ ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফকিরহাট উপজেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্যমতে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা ৪৩০টি বাগদা চিংড়ির ঘেরে ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর বাইরে আরও ৬২৫টি ঘের আংশিক বা সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩০০ একর জমিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ির ঘের ধসে পড়েছে।
চাষিদের ভাষ্যমতে, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে, আর সেই মরা মাছ খেয়ে উচ্চমূল্যের গলদা চিংড়িও মারা যাচ্ছে অথবা বিক্রিযোগ্যতা হারাচ্ছে। অনেক চাষি ঋণের বোঝা নিয়ে মাছ রক্ষায় নেট বা বাঁধ নির্মাণ করছেন, কিন্তু ক্ষতির গভীরতা দেখে তারা এখন প্রায় নিঃস্ব।
দেশীয় হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদনের ঘাটতি এবং নদী থেকে পোনা আহরণে নিষেধাজ্ঞার ফলে চাষিরা বাধ্য হয়ে ভারত থেকে চোরাপথে পোনা আমদানি করছেন। কিন্তু এই পোনা প্রত্যাশিত উৎপাদন না দিতে পারায় লোকসান আরও বেড়েছে।
ফকিরহাট উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আছাদুল্লাহ বলেন, “মাছ ঘের ও পুকুর থেকে ভেসে গেলেও মৎস্য বিভাগের দৃষ্টিতে ক্ষতি হয়নি, কারণ মাছগুলো মারা যায়নি।” তিনি আরও জানান, ভাইরাস মোকাবেলায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার টানানো এবং মাঠ পর্যায়ে পরামর্শমূলক সভা পরিচালনা করা হচ্ছে।
তবে চাষিরা এই বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি সহায়তা অপ্রতুল এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। তাদের দাবি, দ্রুত আর্থিক সহযোগিতা ও আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।