৮৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, নথিপত্র চুরি ও হত্যা মামলায় ১ নম্বর আসামি, তদন্তে নেমেছে ৫ সদস্যের কমিটি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | দৈনিক সংবাদ ৭১
সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাবউদ্দীনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নথিপত্র চুরি, প্রশাসনিক স্বৈরাচার, দায়িত্বে গাফিলতি ও হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এই গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন এবং কলেজ গভর্নিং বডির যৌথ উদ্যোগে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি সংক্রান্ত সংশোধিত বিধিমালা ২০১৯-এর ১৭(ঘ) ধারা অনুযায়ী গঠিত এই তদন্ত কমিটি আগামী ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রথম বৈঠকে বসবে।
অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, অধ্যক্ষ মো. শিহাবউদ্দীন কলেজের তহবিল থেকে মোট ৮৫,৪২,৩১১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি কোনো নির্ধারিত ক্যাশবহি না রেখে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে হিসাব রাখতেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে তিনি অফিসে অনুপস্থিত থাকেন এবং নিয়ম লঙ্ঘন করে উপাধ্যক্ষকে দায়িত্ব না দিয়ে ছুটিতে যান। তার অনুপস্থিতির পরদিন, অর্থাৎ ৬ আগস্ট ভোরে কলেজের অফিস সহায়ক মতিয়ার রহমান ও সুসংকর রায়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরি হয় বলে পাহারাদারদের বরাত দিয়ে অভিযোগ ওঠে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মো. আব্দুস সামাদ ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর তারিখে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, শিহাবউদ্দীন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সাবেক অধ্যক্ষকে তিন দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব না দেওয়ায় ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর কলেজ গভর্নিং বডি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এছাড়া ২০২৫ সালের ২২ জুন ও ১০ জুলাই দুই দফায় আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরতের তাগাদা পত্র পাঠানো হয়।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছাড়াও অধ্যক্ষ শিহাবউদ্দীনের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও গুরুতর অভিযোগ। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলায় সংঘটিত ত্রিপল হত্যা মামলায় তিনি ১ নম্বর আসামি। একইসঙ্গে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আশাশুনি থানায় দায়ের করা সিআর মামলা নং ৩৯২/২৪-এও তিনি প্রধান আসামি।
তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করে তিন মাসের জন্য বরখাস্তাদেশ স্থগিত করালেও পরবর্তীতে সরকার পক্ষের আপিলের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দেন (আপিল মামলা নং-৮৭/২০২৫)।
বর্তমানে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত কমিটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী অধ্যক্ষ মো. শিহাবউদ্দীনকে স্থায়ী বরখাস্ত, তার এমপিও বাতিল এবং আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরতের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।