সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের প্রস্তুতির নির্দেশনার সম্ভাবনা
আবিদ হাসান আব্দুল্লাহ | স্টাফ রিপোর্টার
দৈনিক সংবাদ ৭১ | ২৮ জুলাই ২০২৫
আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে এই ঘোষণা আসবে বলে সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণ–অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দিতে পারেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ জানানো হবে।
সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশনের কাছে এ–সংক্রান্ত বার্তা আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ ৫ আগস্টের মধ্যে প্রকাশের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে সনদের একটি খসড়া তৈরি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
রোববার সকালে এক বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সোমবারের মধ্যে খসড়া সনদ দলগুলোকে পাঠানো হবে। এরপর নির্ধারিত দিনে সই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।”
তিনি আরও জানান, খসড়া নিয়ে বিস্তারিত সংলাপ হবে না, তবে বড় ধরনের মৌলিক আপত্তি উঠলে তখন আলোচনা হতে পারে। সনদে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, পটভূমি ও অঙ্গীকার।
গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে।” তবে সেই ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি দৃশ্যমান না হওয়ায় বিএনপির মধ্যে সংশয় বাড়ে।
এছাড়া কিছু রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও পিআর পদ্ধতিতে (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেয়—যা বিএনপি সন্দেহের চোখে দেখছে।
সবশেষ গত ২২ জুলাই থেকে তিন দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। ২৬ জুলাই তিনি ১৪টি দল–জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, আগামী চার–পাঁচ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের সময়সীমা ও তারিখ ঘোষণা করবেন।”
নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার বিষয়টি বিএনপি ইতিবাচকভাবে দেখছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যদি দুই–চার দিনের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করেন, আমরা খুশিই হব। কারণ, এটাই তো আমাদের দাবি ছিল।”
তবে জামায়াতে ইসলামী নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হওয়া জরুরি। তা না করে এখনই তারিখ ঘোষণা করা হলে সেটা হবে অপরিপক্বতা।”
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আগামী চার–পাঁচ দিনের মধ্যে যদি জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়, তাহলে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকবে না।”
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মনে করছে, জুলাই সনদের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্যই সরকার নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাইছে।