সিলেট ব্যুরো
দৈনিক সংবাদ ৭১
সিলেট নগরজুড়ে চলমান বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গত দুই সপ্তাহ ধরে লোডশেডিং মারাত্মক রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে নগরীর প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের আওতাধীন ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার স্টেশনটি টানা ১০ দিন ধরে বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা গেছে, কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশনের একটি ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ায় সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। যেহেতু যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, তাই কবে নাগাদ মেরামত সম্পন্ন হবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
বিউবো সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, “সিলেটে আমাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন নেই। জাতীয় গ্রিডের ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে লো-ভোল্টেজ সমস্যাও যুক্ত হয়েছে, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল।”
তবে পাওয়ার স্টেশন বন্ধের প্রকৃত কারণ নিয়ে ভিন্নমত দেখা গেছে। একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পাওয়ার স্টেশনে বড় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। এটি মূলত রক্ষণাবেক্ষণের কারণেই বন্ধ রাখা হয়েছে।”
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন স্টেশন বন্ধ থাকায় সিলেট মহানগরীর পাঁচটি বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন ১৩টি সাবস্টেশনের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত লোডের কারণে সাবস্টেশনগুলোতে ফিউজ ও তার ছিঁড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা বেড়েছে। একইসঙ্গে ঘন ঘন ভোল্টেজ ড্রপের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
বিউবো’র তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সিলেট বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই-আরেফিন বলেন, “আমাদের হাতে বিদ্যুৎ নেই। ঢাকা থেকে যখন-তখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, এতে পুরো সিস্টেমের ফ্রিকোয়েন্সি ডাউন হয়। ঢাকার সিদ্ধান্ত সিলেটের বাস্তবতায় ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।”
এদিকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসন্তোষও দিন দিন বাড়ছে। কেউ কেউ বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের ফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করে দুর্ব্যবহারও করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নগরবাসী দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন।