মো: গোলাম কিবরিয়া
রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
দৈনিক সংবাদ ৭১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো লিখিত পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। এতদিন শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে এলেও এখন থেকে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই নির্বাচিত প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য আহ্বান জানানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নতুন এ নিয়মের প্রথম বাস্তবায়ন হয়েছে ২২ জুলাই সমাজকর্ম বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান লিখেছেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে গুণগত মূল্যায়ন নিশ্চিত করা যাবে।” তিনি জানান, বোর্ডের সদস্যরা নিজেরা হাতে লিখে প্রশ্নপত্র জমা দেন, যেগুলো থেকে উপাচার্য নির্ধারিত প্রশ্ন বাছাই করেন। পরীক্ষার পর উত্তরপত্র কোডিং করে নির্ধারিত প্রশ্নদাতার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর চূড়ান্ত মেধাক্রম নির্ধারণ করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়।
তবে এই নতুন নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল হক তার মতামতে লিখেছেন, “আমি এই লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে একমত নই। এটি বিভাগের শিক্ষকদের মূল্যায়নক্ষমতায় আস্থার অভাব প্রকাশ করে। যারা ৪ বছর অনার্স, ১ বছর মাস্টার্সে ধারাবাহিকভাবে ভালো করেছে, তারা ভাইভাতেই যাচাই হওয়া উচিত।”
গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বিশ্বের কোথাও ৪৫ মিনিটের লিখিত পরীক্ষার প্রচলন নেই। বরং অ্যাকাডেমিক রেজাল্টকে ৮০ নম্বর, লিখিত ১০ এবং ভাইভা ১০ নম্বর দিলে সেটিই হবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এই লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে একটি অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে।”
অন্যদিকে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামিরুল ইসলাম এই পদ্ধতিকে আগের তুলনায় উন্নত বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “আমি লিখিত, ভাইভা, রেজাল্ট, প্রবন্ধ ও ডেমোনস্ট্রেশন ক্লাস মিলিয়ে ১০০ নম্বর ভিত্তিক মূল্যায়নের পক্ষপাতী। এটি সময়সাপেক্ষ হলেও ভালো প্রার্থী নির্বাচনে সহায়ক হবে।”
নতুন এই প্রক্রিয়াটি প্রাথমিকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করলেও অনেকেই এটিকে গুণগত মান নিশ্চিতের এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়মিত মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি আরও পরিশীলিত করা হবে।