মো: গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী প্রতিনিধি
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামকে তার নিজ শহর রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৫) বিকেলে রাজশাহী নগরের সপুরা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেনসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
জানাজার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করা হয় এবং সংবেদনশীল বক্তব্য রাখেন তার বাবা তহুরুল ইসলাম ও মামা মতিউর রহমান। চোখের জলে ভেঙে পড়ে তৌকিরের বাবা বলেন, ‘আমি সেই হতভাগ্য পিতা, যে নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছি।’ তিনি সকলের কাছে দোয়া চান তার সন্তানের ও দুর্ঘটনায় নিহত অন্যান্যদের আত্মার শান্তির জন্য।
এর আগে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে তৌকির ইসলামের মরদেহ ঢাকার তেজগাঁও থেকে রাজশাহী সেনানিবাসে পৌঁছায়। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে পরিবারের ভাড়া বাসায়। সেখানে কিছুক্ষণ মরদেহ রাখা হয় সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরবর্তীতে মরদেহ জানাজার জন্য স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়।
তৌকিরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীতেই। তিনি রাজশাহী ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করার পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণের শেষ ধাপে এসে গত সোমবার তিনি জীবনের প্রথম একক (সলো) যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করেন। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক দিনই হয়ে ওঠে তার জীবনের শেষ দিন—বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
তৌকির ইসলামের পরিবার জানায়, বছরখানেক আগে তার বিয়ে হয়েছিল। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক।
ঘটনার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয় এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।