মো. রায়হান হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক অনুপাতে) নির্বাচন ব্যবস্থা দেশের বাস্তবতা ও স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বিভ্রান্তিমূলক সমাজ সৃষ্টি হবে এবং রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত সমাবেশ এবং শহীদ পরিবার ও নির্যাতিত পেশাজীবীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, “বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহায়তায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবসহ অন্যদের সক্রিয় করা হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে রক্তদাতা টিম গঠন করা হয়েছে।”
তারেক রহমান বলেন, “দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হলে রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ, চরমপন্থা ও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দেবে। এ ধরনের পদ্ধতি দেশের ঐক্য বিনষ্ট করবে।”
তিনি বলেন, “কেউ গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বললেও দেশের বাস্তবতায় পিআর পদ্ধতি মোটেও উপযোগী নয়। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানই তার প্রমাণ। আমাদের দরকার জনগণের ঐক্য, আর সেটাই দেশকে ফ্যাসিবাদ ও তাঁবেদারি থেকে মুক্ত রাখার প্রধান উপায়।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “সংবিধান, বিধিবিধান বা আইনি কাঠামো দিয়ে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার ঠেকানো যায় না। যারা আইনের তোয়াক্কা করে না, তারাই ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে। এজন্য প্রয়োজন জনগণকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা।”
তিনি বলেন, “জনগণের সরাসরি ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনই বিএনপির মূল দাবি। গণতন্ত্র চর্চা নিশ্চিত করতে না পারলে কোনো আইনই কাজে আসবে না।”
তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, “একটি মহল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাম করে নিজেদের সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে এবং নির্বাচন প্রতিহত করতে নানা পাঁয়তারা চালাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জনগণের ঘাড়ে এক ফ্যাসিবাদী অপশাসন চেপে ছিল। এই শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে পেশাজীবী, শ্রমজীবী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।”
তারেক রহমান বলেন, “২০২৪ সালের ১৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়। রংপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৬ শহীদদের আত্মদান আমাদের ইতিহাসের অংশ। শহীদ ফারুক ছিলেন একজন ফার্নিচার কর্মী। তার স্ত্রী বলেছেন, ‘আমার স্বামী ছাত্র ছিলেন না, তাই কেউ তার কথা বলে না।’ এটি আমাদের প্রচলিত রাজনীতির প্রতি এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।”
তিনি বলেন, “এই কথার মধ্যেই নিহিত আছে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের বার্তা। শুধু শিক্ষিত নয়, শ্রমজীবী মানুষও দেশের আন্দোলনের চালিকাশক্তি।”