হারুন অর রশিদ, স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক সংবাদ ৭১
চুয়াডাঙ্গা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার উজ্জ্বল বড়ুয়ার ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও জনমনে ক্ষোভ। ভিডিওতে দেখা যায়, অফিসের পুরাতন ভবনে নিজের টেবিলে বসে গুনে গুনে টাকা নিচ্ছেন তিনি। এ সময় ঘুষদাতা তাকে বলেন, “এক্সেন স্যার বলছে, আমার নাম করে যদি কেউ এক টাকাও চাই, দেবেন না।” জবাবে উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন, “আবার গিয়ে বলেন, দাদা এই কথা বলছে। দেখবেন, তখন না বলবে না।” এর পরপরই তাদের মধ্যে স্পষ্ট টাকার লেনদেনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়।
তদন্তে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন উজ্জ্বল বড়ুয়া। তখন আর্থিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল না থাকলেও বর্তমানে তিনি বিলাসবহুল দ্বি-তল ভবনের মালিক। এছাড়াও তার নামে ও বেনামে রয়েছে তিনটি ট্রাক, একটি সিএনজি, দুটি দোকানসহ বিপুল সম্পদ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এর আগে তিনি কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং শ্রমিক লীগে পদ থাকায় প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি প্রকল্পে নিজের লোক বসিয়ে কাজ ভাগিয়ে নেওয়া, ল্যাব টেস্টে অতিরিক্ত টাকা দাবি এবং নির্মাণ উপকরণের জোগানদাতা হিসেবে কাজ করার মতো গুরুতর অনিয়মে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে বিস্তারিতভাবে উজ্জ্বল বড়ুয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উজ্জ্বল বড়ুয়া ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব হেলালুদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ঠ বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই প্রভাব কাজে লাগিয়েই তিনি অফিস সহায়ক থেকে ক্যাশিয়ার পদে দ্রুত পদোন্নতি পেয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন, “ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের কোনো অভিযোগ আছে? আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে ইচ্ছুক নই। মিডিয়ায় কথা বলতে আমাদের নিষেধ আছে।”
চুয়াডাঙ্গা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, “মিডিয়ায় কথা বলার আগে আমাদের অনুমতি নিতে হয়। তাই মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।