ডেস্ক রিপোর্ট | দৈনিক সংবাদ ৭১
| ১১ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে। বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পরও হত্যাকারীরা লাশের ওপর পৈশাচিক আচরণ করে, যা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে হঠাৎ জনতা জমে। সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক এক রক্তাক্ত দেহ টেনে বাইরে নিয়ে আসছে। এক যুবক লাশের গালে আঘাত করে, অপরজন বুকের ওপর লাফাচ্ছে। পরে আরও দু’জন এসে একই আচরণ করে, একপর্যায়ে একজন মাথায় আঘাত করে। শত মানুষের সামনে এমন অমানবিক দৃশ্য ঘটলেও কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি।
নিহত সোহাগের পরিবার দাবি করেছে, পূর্বপরিচিত কয়েকজন যুবক পরিকল্পিতভাবে তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। ভাঙারি ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। স্ত্রী লাকী বেগম এবং দুই সন্তান রয়েছে তার।
লাকী বেগম অভিযোগ করে বলেন, “স্থানীয় মহিনসহ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। আশপাশে লোকজন থাকলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।”
নিহতের আত্মীয়রা জানান, সোহাগ নিজের চেষ্টায় ভাঙারি ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন এবং গত কয়েক বছরে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন। স্থানীয় মহিন নামের এক যুবক, যিনি নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন, সম্প্রতি তার ব্যবসায় ভাগ দাবি করে আসছিলেন। রাজি না হওয়ায় সোহাগকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি হত্যার আগের দিনও তার উপর গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোহাগকে টেনে-হিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার ওপর শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। মাথায় ইট ও শক্ত বস্তু দিয়ে আঘাত করা হলে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের একজনের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এ রকম অমানবিকতা আগে দেখা যায়নি। এটি শুধু একটি খুন নয়, পুরো সমাজব্যবস্থার ওপর এক ধরণের চ্যালেঞ্জ। এ ধরণের ঘটনা যদি রোধ না করা যায়, তবে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।”