ফকিরহাটে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশের হার ৭৫.৮৮%: শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আজীজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার, দৈনিক সংবাদ ৭১
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল সারা দেশের মতোই বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলায়ও প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাজুড়ে শিক্ষার্থীদের সাফল্য যেমন দৃশ্যমান, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও উঠে এসেছে ফলাফলের বিশ্লেষণে। এবারের ফলাফলে দেখা যায়, ফকিরহাটে মোট ১,৭১৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১,৩০৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশের হার ৭৫.৮৮%, যা জাতীয় গড় ৬৮.৪% থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী GPA-5 অর্জন করেছে।
জাতীয় পর্যায়ে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৬৮.৪% এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে যথাক্রমে ৬৮.০৯% ও ৭৩.৬৩%। GPA-5 পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। তবে গত বছরের তুলনায় এবারে সার্বিক পাশের হার ১৪.৫৩% কমে গেছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে কিছু প্রশ্নও তুলেছে।
ফকিরহাট উপজেলায় ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩০টি প্রতিষ্ঠানে ১,৩০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১,০০৯ জন, অর্থাৎ পাশের হার ৭৮%। এখানে ১৩৯ জন GPA-5 অর্জন করেছে। সবচেয়ে সফল প্রতিষ্ঠান ছিল বাহিরদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যেখানে ১৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১২৩ জন (পাশের হার ৮১%) এবং GPA-5 পেয়েছে ২২ জন। অন্যদিকে, সবচেয়ে দুর্বল ফল করেছে ধনপোতা মাসকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়—যেখানে পাশের হার মাত্র ২৮%।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। পাশ করেছে ১৮৫ জন, পাশের হার ৭৬.৮%। সবচেয়ে ভালো ফল করে হযরত আমির হামজা (রাঃ) দাখিল মাদ্রাসা, যেখানে পাশের হার ছিল ৭৯.২%। সবচেয়ে কম ফলাফল করে ভাবনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, যেখানে পাশ করেছে মাত্র ১১ জন, পাশের হার ৫০%।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাশ করেছে ১০৯ জন, পাশের হার ৬১.৬%। এই বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে হাজী আব্দুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যার পাশের হার ৬৭.৮% এবং GPA-5 পেয়েছে ৪ জন। সবচেয়ে দুর্বল ফল করেছে সাকিনা আজাহার টেকনিক্যাল কলেজ, যার পাশের হার মাত্র ৫৫.১%।
ফলাফল প্রসঙ্গে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমনা আইরিন বলেন, “ফকিরহাট উপজেলার শিক্ষার্থীরা এবারের ফলাফলে আশানুরূপ সাফল্য দেখিয়েছে। পাশের হার ধরে রাখতে এবং মান উন্নয়নে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও পরিবেশবান্ধব চিন্তা-চেতনা গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ভালো ফলাফলের পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠানের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, মনিটরিং এবং কোচিং কার্যক্রমের উন্নয়ন করতে হবে।”
ফলাফল বিশ্লেষণ বলছে, ফকিরহাটে শিক্ষা ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে উন্নতির পথে থাকলেও পিছিয়ে পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ নজর প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের সফলতার গল্প যেমন অনুপ্রেরণা জোগায়, তেমনি ব্যর্থতার কারণ খুঁজে নিয়ে তা সমাধানে উদ্যোগী হওয়াটাও এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ভবিষ্যতে আরও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।