মোহাম্মদ হোসাইন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২৫ |
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যে ভয়াবহ মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার ধ্বংসক্ষমতার চেয়েও ছয় গুণ বেশি বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থাপিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক ফেলেছে।
ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেন, “গাজাকে ধ্বংস করতে ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করেছে বিভিন্ন অস্ত্র কোম্পানি। এই যুদ্ধকে তারা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছে। ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ আসলে একটি পরিকল্পিত মৃত্যুফাঁদ—যার উদ্দেশ্য ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষদের হত্যা বা গাজা থেকে পালাতে বাধ্য করা।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ মাসে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে ৫৭,১৩০ জন নিহত এবং ১,৩৪,৫৯২ জন আহত হয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায়ই নিহত হয়েছেন ১১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৫৮১ জন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন ছিলেন ত্রাণ সহায়তার আশায় অপেক্ষমাণ মানুষ।
আলবানিজ আরও বলেন, “তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২১৩ শতাংশ মুনাফা হয়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে, একজন মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, আর আরেকজন সেই মৃত্যুর ওপর দাঁড়িয়ে লাভ করছে।”
তিনি বলেন, “গাজা এখন ইসরাইলি সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের জন্য এক ভয়াবহ পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে। এখানে নতুন অস্ত্র, ড্রোন, নজরদারি ও রাডার সিস্টেম পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
জাতিসংঘ দূতের দাবি, অন্তত ৪৮টি অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানি, ব্যাংক, জ্বালানি ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় এই যুদ্ধের অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
তার আহ্বান, “জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই গণহত্যা এখন চোখের সামনে ঘটছে, সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। তাই নিরপেক্ষতা বা অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে এর দায় এড়ানো সম্ভব নয়। ট্রেড ইউনিয়ন, আইনজীবী, সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ এবং সরকারগুলোর উচিত একযোগে বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানো।”
বক্তব্যের শেষে ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেন, “মানবতা আজ চরম এক পরীক্ষার মুখোমুখি। আমরা যদি চুপ করে থাকি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।”