রুয়েল ইসলাম রুবেল, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার
বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শিক্ষার্থীরা আজ অংশ নিচ্ছেন কুরআন মাজিদ বিষয়ে।
করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবারের পরীক্ষায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাকে। শিক্ষা বোর্ড ইতোমধ্যে পরীক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং মশক নিধনের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, “স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণে আমরা সতর্ক। প্রশ্নফাঁস ও নকল ঠেকাতেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে।” স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য বোর্ডের একাধিক টিম দায়িত্ব পালন করবে।
এ বছর ১১টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডসহ সারাদেশে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ও ছাত্রী ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন। সারাদেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঢাকা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৯১ হাজার ২৪১ জন, রাজশাহীতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৪২ জন, কুমিল্লায় ১ লাখ ১ হাজার ৭৫০ জন, যশোরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ জন, চট্টগ্রামে ১ লাখ ১৩৫ জন, বরিশালে ৬১ হাজার ২৫ জন, সিলেটে ৬৯ হাজার ৬৮৩ জন, দিনাজপুরে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৩২ জন এবং ময়মনসিংহে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন। এছাড়া আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজার ১০২ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে বিএম/বিএমটি পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজার ৬১১ জন।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা আমলে নেয়নি। ফলে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আজ থেকেই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, যা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রে মেডিক্যাল টিম রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে, যাতে কেন্দ্রের সামনে কোনো ভিড় বা জটলা না হয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্র ও আশপাশে মশা নিধনের স্প্রে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর কেউ প্রবেশ করলে রেজিস্ট্রারে দেরির কারণ লিপিবদ্ধ করে বোর্ডকে জানাতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরীক্ষা শুরুতে বিলম্ব হলে ওই পরিমাণ সময় পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত দেওয়া হবে।
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় শিক্ষা বোর্ড ৩৩টি নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—প্রশ্নপত্র ট্রেজারিতে সুরক্ষিত রাখা, ট্রেজারি অফিসার ও কেন্দ্র সচিবের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, উপজেলা সদরের বাইরে ট্রাঙ্ক না রাখা ইত্যাদি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পরীক্ষার্থীদের হাতে যথেষ্ট সময় রেখে বাসা থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীদের পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনের রাস্তায় না থেমে কাছাকাছি কম ব্যস্ত স্থানে নামতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার সময় যানবাহন কেন্দ্রের আশপাশে পার্কিং করা যাবে না, করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ডিএমপি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানান, প্রশ্নফাঁস ও নকল ঠেকাতে পুলিশের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্রের সঠিক সেট ও সংখ্যা যাচাই করতে হবে। অব্যবহৃত প্রশ্নপত্র খোলা যাবে না এবং অক্ষত অবস্থায় বোর্ডে ফেরত পাঠাতে হবে। পরীক্ষার শেষে উত্তরপত্র পুলিশের পাহারায় বোর্ডে জমা দিতে হবে।