স্টাফ রিপোর্টোর, প্রভাষক জাহিদ হাসান :
দেশে করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ ক্রমেই উদ্বেগজনক মাত্রায় বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবির সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন, যা চলতি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ। একই সময়ে করোনা ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। আর জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে ৮২ শতাংশের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪১টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪.৭৬ শতাংশ। তবে এসময়ে করোনায় কেউ মারা যায়নি। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৫২ হাজার ১৮ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫১৮ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৯ জন মারা গেছেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৪ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৫৪৪ জন। জুন মাসেই ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ১৯৯ জন রোগী। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৮০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের মধ্যে ঢাকায় রয়েছেন ৩১০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৭০ জন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগের সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ১৫৭ জন, চট্টগ্রামে ৫৮ জন, ঢাকায় ৩৫ জন, খুলনায় ৮ জন এবং রাজশাহীতে ৪৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪২ জন এবং দক্ষিণে ৫০ জন রোগী পাওয়া গেছে।
এদিকে আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে তাদের ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা ১৭১ জনের মধ্যে ১৪০ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে, যা প্রায় ৮২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি অনেক বেশি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চিকুনগুনিয়া এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর উপসর্গে হঠাৎ উচ্চ জ্বর, তীব্র জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
আইসিডিডিআরবি সবাইকে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা পরামর্শ দিয়েছে—ঘরের আশপাশে জমে থাকা পানি তিন দিন পরপর ফেলে দেওয়া, পানির পাত্র ঢেকে রাখা ও পরিষ্কার রাখা, মশানাশক স্প্রে করা, জানালায় নেট ব্যবহার এবং দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। মশার কামড় এড়াতে ফুলহাতা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরার পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।
ভুল চিকিৎসা থেকে রক্ষা পেতে জ্বর বা সংশ্লিষ্ট উপসর্গ দেখা দিলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।