সম্পাদক ও প্রকাশক, আহম্মদ আলী, দৈনিক সংবাদ ৭১
বিশ্বব্যাপী আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাস। সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতে করোনার কিছু নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যেগুলো অধিক সংক্রামক এবং দ্রুত বিস্তার লাভে সক্ষম। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর কারণে আমাদের দেশেও সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলো পূর্বের তুলনায় দ্রুত ছড়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে টিকাকরণ সত্ত্বেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। আমরা অতীতে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছি—যেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে দেখা দিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি। সেই বিভীষিকার স্মৃতি এখনো আমাদের মনে তাজা, আর ঠিক এমন এক সময়েই আবারও সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর আমাদেরকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, অবস্থা ভয়াবহ হয়ে ওঠার আগেই আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জনপরিসরে মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম এড়িয়ে চলার মতো নির্দেশনা পুনরায় জারি করা হয়েছে। তবে শুধু নির্দেশনা দিলেই চলবে না; এসব নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে—তাদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া টিকা ও বুস্টার ডোজ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা এখন সময়ের দাবি। যেসব মানুষ এখনো বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতকে প্রস্তুত রাখতে হাসপাতাল, আইসোলেশন ইউনিট ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে হবে। নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে গেলে যেন কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে, সেজন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ ও জরুরি ওষুধ মজুত রাখাও জরুরি হয়ে উঠেছে।
একই সঙ্গে, গণমাধ্যম ও সরকারি প্রচার মাধ্যমে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য রোধে সচেষ্ট থাকতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, করোনা নিয়ে অসত্য তথ্য ও ভুল ধারণা সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং অনেক মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। তাই বিজ্ঞানসম্মত, সহজ ও বোধগম্য ভাষায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মানুষ প্রয়োজনীয় তথ্য পায় এবং আতঙ্কে না ভোগে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, করোনা নিয়ে অবহেলা বা উদাসীনতা আমাদের আবারও বড় ধরনের বিপদের মুখে ফেলতে পারে। অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের সতর্ক করেছে—এখন প্রয়োজন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। শুধু সরকার নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ সবার সম্মিলিত সতর্কতাই পারে এই নতুন ঢেউকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে।