পটুয়াখালী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হোগলা পাতার ব্যবহার
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকা থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে হোগলা পাতার বন ও এর ব্যবহার। জেলার নিম্নাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া হোগলা পাতা একসময় অধিকাংশ মানুষের জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি মাদুর, নামাজের পাটি, হাতপাখা, দড়িসহ নানান প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করে স্থানীয় মানুষ বাজারে বিক্রি করতো, যা ছিল তাদের আয়ের অন্যতম অবলম্বন।
বেত ও বাঁশের তুলনায় হোগলা পাতার সামগ্রী সাশ্রয়ী হওয়ায় আগে এটি ছিলো ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন। তবে সময়ের পরিবর্তনে মানুষ পেশা বদলেছে, বাজার দখল করেছে সস্তা দামের প্লাস্টিক পণ্য। ফলে হোগলা পাতার তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে।
জেলার লোহালিয়া, দূমকী, কাকড়াবুনিয়া, ভয়াং, হাবিব বাজার, দেউলী, লেবুখালী, সুবিদখালী, চরখালী, মনোয়ার খালী, পায়রা কুঞ্জ, ভিকাখালী, রামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠঘাট ঘুরে জানা গেছে, হোগলা পাতার বন উজাড় হয়ে গেছে। অনেক জমি ও খাল এখন দখল হয়ে গেছে মৎস্য ঘের বা বসতবাড়ির আওতায়।
হাজিখালী গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, “কয়েক বছর আগেও আমাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল হোগলা পাতার তৈরি সামগ্রী। এখন আগের মতো হোগলা পাতা পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায়, তাও বেশি দামে কিনতে হয়।”
জেলা কৃষি অফিস জানায়, হোগলা পাতা একটি জলজ উদ্ভিদ যা উপকূলীয় অঞ্চলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এটেঁল মাটিতে জন্মায়। নদী, খাল ও জলাবদ্ধ স্থানে এটি বেশি জন্মে। এর উচ্চতা প্রায় ৫ থেকে ১০ ফুট। বড় হওয়ার কিছুদিন পর এতে ফুল হয়, যেখান থেকে ‘হোগল গুড়া’ নামে পরিচিত একটি হলুদ রঙের পাউডার পাওয়া যায়, যা পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের কৃষক শ্রী নকুল কুমার জানান, “এক যুগ আগেও গ্রামে প্রায় প্রতিটি পরিবারে হোগলা পাতার কাজ হতো। নামাজ পড়া, খাওয়া, ঘুমানোসহ সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন সেই জায়গায় জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি মাদুর ও হাতপাখা।”
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, হোগলা পাতার যথেষ্ট কৃষি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও এ উদ্ভিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পরিকল্পিতভাবে হোগলা পাতার চাষাবাদ শুরু করলে এটি হতে পারে কৃষি উন্নয়নের একটি সম্ভাবনাময় দিক।