মাওয়া ঘাটে ৭৫৬ কোটি টাকার ‘মাস্টারপ্ল্যান’: আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন হাব গড়তে চায় বিআইডব্লিউটিএ

আজীজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার

পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে ওঠা পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রায় ৭৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়ন করেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন ২০২৫) দুপুরে বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ড্রেজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও নৌ উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সামনে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হয়।

প্রণীত পরিকল্পনায় ২৯ দশমিক ৩১ একর জমিতে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন একটি পর্যটন হাব গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এই কেন্দ্রের মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে থাকবে নদীভিত্তিক জীববৈচিত্র্য নিয়ে গড়ে তোলা রিভার মিউজিয়াম, প্রাকৃতিক পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে নির্মিত ইকো রিসোর্ট ও সুইমিং পুল, শিশুদের জন্য আলাদা কিডস জোন, ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুনঃস্থাপিত পুরনো ফেরিঘাট, ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি ও নদীর ধারে হাঁটার উপযোগী ওয়াকওয়ে।

প্রকল্প এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে পুরো অঞ্চলকে চারটি জোনে ভাগ করা হবে।

• জোন-এ: মোংলা বন্দরের আদলে ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল ও বিআইডব্লিউটিএর আইটি ভবন।
• জোন-বি: ট্রাক পার্কিং এলাকা।
• জোন-সি: প্রশাসনিক ভবন এলাকা।
• জোন-ডি: ফেরিঘাট সংলগ্ন বাস পার্কিং জোন।

তবে এত বড় প্রকল্পের অর্থায়ন এখনো অনির্ধারিত। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেও অর্থের উৎস বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেননি। এ বিষয়ে নৌ উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “স্থানীয় উদ্যোক্তা ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় কিছু সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। প্রয়োজন হলে জমি বরাদ্দও দেওয়া যেতে পারে। তবে পর্যটন কেন্দ্র পরিচালনার সক্ষমতাও আমাদের ভাবতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “পর্যটন কেন্দ্র গড়ার দায়িত্ব আমাদের মন্ত্রণালয়ের নয়, তবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার কথা মাথায় রেখে ইকো-কনটেইনার পোর্ট গড়ে তোলা যেতে পারে। এছাড়া পুরনো ফেরিঘাট রেখে ঐতিহ্য সংরক্ষণ করাও আমাদের লক্ষ্য।”

এই অনুষ্ঠানে নৌ উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রেজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন। তিনি ইনস্টিটিউটের পাঠদান কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এবং সেখানে চলমান ‘বেসিক ড্রেজিং কোর্স’-এ অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে তিনি বিআইডব্লিউটিএর জাহাজ ‘পরিদর্শী’ তে চড়ে পদ্মা নদীর কিছু অংশ পরিদর্শন করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার, ড্রেজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মো. শাহজাহান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজাউল করিম এবং লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন প্রমুখ।