বিশেষ সংবাদদাতা:
রাজশাহীতে চলমান হিমাগার ভাড়া সংকটের অবসান ঘটেছে আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও মধ্যস্থতায় গঠিত বৈঠকে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (১৭ জুন) রাজশাহী সেনানিবাসে দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অংশগ্রহণকারীরা রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
বৈঠকে রাজশাহী কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুর রহমান, রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আহাদ আলী, সহসভাপতি আলম আলী এবং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই আলোচনায় অংশ নেন।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলুর হিমাগার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর বাইরে শ্রমিক খরচ বাবদ ৫০ পয়সা অতিরিক্ত আদায় করা যাবে। তবে যেসব কৃষক ও ব্যবসায়ী পূর্বেই আগাম বুকিংয়ের মাধ্যমে আলু সংরক্ষণ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে আগের চুক্তির ভিত্তিতেই ভাড়া আদায় করতে হবে। শুধু শ্রমিক খরচ হিসেবে ৫০ পয়সা অতিরিক্ত নেওয়া যাবে।
এর আগে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ছিল ৪ টাকা। তবে চলতি মৌসুমে হিমাগার মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে হঠাৎ ৮ টাকা নির্ধারণ করলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর ফলে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
ক্ষুব্ধ আলুচাষিরা অভিযোগ করেন, ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়া হয়েছে, যা তাদের উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয় এবং লাভের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ না করতে পারলে তাদের ফসল পচে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
এই প্রেক্ষাপটেই রাজশাহী সেনানিবাসের হস্তক্ষেপে আলোচনার আয়োজন করা হয়। সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৈঠক শেষে বলেন, “আমরা চাই না কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হোক কিংবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ থাকুক। তাই স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই সমঝোতা হয়েছে।”
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ জুন) থেকে নতুন ভাড়া জনসাধারণের মাঝে প্রচার করবে।
স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এটি সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থানের প্রতিফলন এবং সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকার সফল উদাহরণ।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মহল জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভাড়া নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়, সে জন্য একটি যৌথ তদারকি কমিটি গঠনের চিন্তা করা হচ্ছে।
এই সমঝোতার ফলে রাজশাহীর আলু চাষ ও বিপণন ব্যবস্থা স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।