স্টাফ রিপোর্টার, যশোর:
যশোর শহরের ব্যস্ততম এলাকা মুজিব সড়কের দড়াটানা মোড়সংলগ্ন যশোর বুক ডিপো নামের একটি বই বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার (১৭ জুন) দিনেদুপুরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশবাক্সের তালা ভেঙে চোরেরা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি শহরের ব্যবসায়ী মহলে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি ঘটেছে দিনের আলোয় শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকায়, যেখানে নিয়মিত আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের আনাগোনা লেগেই থাকে।
চুরিকৃত প্রতিষ্ঠান যশোর বুক ডিপোর পরিচালক পারভেজ হোসেন জানান, তার দোকানটি মুজিব সড়কের আইনজীবী সমিতির ২ নম্বর ভবনের নিচতলায় অবস্থিত। বই বিক্রির পাশাপাশি তিনি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও (বিশেষ করে বিকাশ) পরিচালনা করেন। মঙ্গলবার দুপুরে জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য তিনি মসজিদে যান এবং যাওয়ার আগে পাশের ফুটপাতে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জুম্মানকে দোকানটি সাময়িক দেখভাল করার অনুরোধ করেন। ক্যাশবাক্সে তালা লাগিয়ে নিশ্চিন্তে মসজিদে যান তিনি।
কিন্তু নামাজ শেষে ফিরে এসে তিনি দেখতে পান, দোকানের ক্যাশবাক্সটি ভাঙা এবং ভিতরে থাকা টাকা উধাও। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ওই সময়ে দোকানে থাকা জুম্মানকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং পাশের দোকানগুলো থেকেও কেউ তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি।
খবর পেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তদন্তে জানা যায়, দোকানে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার মূল সুইচ চুরি হওয়ার আগেই কেউ একজন হাত দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। শুধু একটি দৃশ্যে চোরের পায়ের একটি অংশ ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যা থেকে পরিপূর্ণ শনাক্ত সম্ভব হয়নি।
পুলিশ জুম্মানকে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে খুঁজে না পেয়ে তার সম্ভাব্য অবস্থান খতিয়ে দেখে এবং পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, চুরির সঙ্গে জড়িতরা ওই দোকানে আগেও যাতায়াত করতেন এবং ভিতরের গোপন তথ্য সম্পর্কে জানতেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। দোকানের ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে চোরেরা জানত এবং তারা ক্যামেরা বন্ধ করার বিষয়টিও পরিকল্পনার অংশ হিসেবে করেছে। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছি।”
তিনি আরও জানান, আশপাশের অন্যান্য দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সম্ভাব্য আগমন ও প্রস্থান পথগুলো যাচাই করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এই ঘটনার পর শহরের অনেক ব্যবসায়ী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ব্যস্ততম এলাকায় দিনের বেলায় যদি এমন চুরি হতে পারে, তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।