ফের ইসরায়েলের উপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পালটা জবাব তেলআবিবের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আবারও শুরু হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের নতুন অধ্যায়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা পঞ্চম দিনের মতো চলছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও পালটা প্রতিশোধ। শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের একটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণের মধ্য দিয়ে সূচনা হওয়া এই দ্বন্দ্ব ইতোমধ্যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
আলজাজিরার বরাতে জানা গেছে, বুধবার (১৮ জুন) সকালে ইরান ফের একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করে। এতে দেশটির তেলআবিব, হাইফা ও জেরুজালেম শহরজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আকাশে সাইরেন বাজতে শুরু করে, মানুষজন নিরাপদ বাংকারে আশ্রয় নেয়। বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র অথবা ধ্বংসাবশেষ রাজধানী জেরুজালেম ও বৃহত্তর তেলআবিব এলাকায় আঘাত হানে।
তেলআবিবে এক পার্কিং এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ২০টি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন আহত হয়েছেন, তবে নিহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
এর পালটা জবাবে ইসরায়েলও তেহরানকে লক্ষ্য করে পাল্টা হামলার ঘোষণা দেয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের রাজধানী তেহরানের কয়েকটি কৌশলগত অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে রাতের আকাশে বিস্ফোরণের ঝলকানি স্পষ্ট দেখা যায়।
এরই মধ্যে এই সংঘাতকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও রাশিয়া—সব পক্ষই উভয় দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকায় আশঙ্কা বাড়ছে, এই সংঘাত হয়তো পুরো অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দিতে পারে।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বার্তায় যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। মঙ্গলবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন—
“মর্যাদাবান হায়দারের নামে, যুদ্ধ শুরু হলো।”
‘হায়দার’ নামটি ইসলামের ইতিহাসে এক সাহসী যোদ্ধার পরিচয় বহন করে। ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)-এর উপাধি হিসেবে পরিচিত এই নাম ইরানসহ বিশ্বজুড়ে শিয়া মুসলিমদের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বার্তা শুধু ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তাও—যে ইরান আর পশ্চাদপসরণে রাজি নয়।
শেষ কথা:
মধ্যপ্রাচ্য বর্তমানে এমন এক চরম উত্তেজনার মুখোমুখি, যা অতি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো অঞ্চলজুড়ে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের এখন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে এই সংঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বিশ্ববাসী চেয়ে আছে—এই দুই পরাশক্তির হিংস্র সংঘর্ষ থেমে যাবে কোনো সমঝোতার মাধ্যমে, নাকি মানবতার ওপর নেমে আসবে আরেকটি বিপর্যয়।