আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আরও দুটি সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পুনরুত্থানের ঝুঁকি বেড়েছে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত এক সপ্তাহে রয়টার্সের সাংবাদিকরা হাসাকা প্রদেশের আল-ওয়াজির ও তেল বাইদার ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি না দেখে ঘাঁটিগুলো প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়েছেন। বর্তমানে এসব ঘাঁটির রক্ষণাবেক্ষণ করছে এসডিএফ সদস্যরা।
স্থানীয় এক কুর্দি রাজনীতিক জানান, ঘাঁটিগুলো থেকে সব মার্কিন সেনা ইতোমধ্যেই চলে গেছেন। অপর একটি ঘাঁটির প্রহরীও সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই দুটি ঘাঁটি ছাড়ার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় সিরিয়ায় মোট চারটি ঘাঁটি ছেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসেই ওয়াশিংটন ঘোষণা করে—দেশটি সিরিয়ায় তাদের আটটি ঘাঁটি থেকে কার্যক্রম সীমিত করে এখন কেবল একটি ঘাঁটিতে অবস্থান করছে। এপ্রিল মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, সিরিয়ায় মার্কিন সেনা সংখ্যা ২ হাজার থেকে কমিয়ে ৫০০-তে নামিয়ে আনা হতে পারে।
এসডিএফ কমান্ডার মাজলুম আবদি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “একটি ঘাঁটিতে কয়েকশ সেনা দিয়ে আইএস ঠেকানো সম্ভব নয়। তাদের হুমকি দিনদিন বেড়েই চলছে। তবে আমরা অনেক আগেই জানতাম যুক্তরাষ্ট্র এমন পরিকল্পনা করছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন কোনও নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি না হয় এবং আইএসের ওপর চাপ অব্যাহত থাকে।”
এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই আল-শাদাদি ঘাঁটির ওপর তিনটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপাতিত করে বলে এসডিএফ সূত্রে জানা গেছে।
২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছিল আইএস। তারা কট্টর ইসলামি শাসন কায়েম করে, প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ, ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি এবং বিদেশি সাংবাদিকদের হত্যা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ৮০টিরও বেশি দেশের সামরিক জোট এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করে। তবে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা হারালে আবারও আইএস সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে দাবি করেছেন এসডিএফ কমান্ডার আবদি।
তিনি জানান, বর্তমানে দামেস্কসহ বিভিন্ন শহরে আইএস সেলগুলো তৎপর রয়েছে এবং তারা সরকারি অস্ত্রাগার থেকেও অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করেছে।
রয়টার্সকে কয়েকজন কুর্দি কর্মকর্তা বলেন, আইএস এখন যুক্তরাষ্ট্র-ত্যাগকৃত ঘাঁটিগুলোর আশপাশে বিশেষভাবে সক্রিয়, বিশেষ করে দেইর আজ-জোর ও রাক্কা অঞ্চলে।
এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব তীরে সম্প্রতি একাধিক হামলায় অন্তত ১০ জন কুর্দি যোদ্ধা ও নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। একটি হামলায় মার্কিন ঘাঁটির নিকটবর্তী তেল ট্যাংকার বহরের নিচে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি হ্রাসের ফলে এসডিএফ বাহিনী এখন নতুন এক নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি। একদিকে আইএসের পুনরুত্থান, অন্যদিকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সম্ভাব্য বিস্তার—এই দুই চাপ একযোগে সিরিয়ার ভূরাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
তবে এসব নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করে আবদি শুধু বলেন, “আমি আশা করি সংঘাতটি সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে না। আমি মার্কিন ঘাঁটিতে নিজেকে এখনো নিরাপদ মনে করি।”