আন্তর্জাতিক ডেক্স :
গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তা নিতে আসা শত শত ক্ষুধার্ত ও অসহায় ফিলিস্তিনির ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত এবং আরও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলায় প্রথমে ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে এবং এরপর ট্যাংক থেকে শেল নিক্ষেপ করে জনতার ভিড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ভোরবেলায় খান ইউনিসের একটি খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো মানুষের ওপর আচমকা এই হামলা চালানো হয়। বিস্ফোরণে অনেকেই ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, আর বাকিরা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয় নাসের হাসপাতালে আহতদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। চিকিৎসা সামগ্রী ও শয্যার ঘাটতির কারণে অনেককে হাসপাতালের মেঝেতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রতিটি মুহূর্তে নতুন নতুন আহত রোগী পাচ্ছি। অনেককেই গাধার গাড়ি, রিকশা বা হাতে ধরে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। এটা কোনো সাধারণ অবস্থা নয়—এটা মানবিক বিপর্যয়।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, একই দিনে গাজার অন্যান্য অঞ্চলেও ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণ ও বিমান হামলা অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন স্থানে এসব হামলায় আরও অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে মঙ্গলবার (১৭ জুন) একদিনেই গাজায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৬৫ জনে।
এই ঘটনা গত তিন সপ্তাহে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিলো। এর আগেও একাধিকবার খাদ্য সহায়তার জন্য জড়ো হওয়া জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে ‘চরম অমানবিক’ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বলেন, “ক্ষুধার্ত জনগণের ওপর এই ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। এই সহিংসতা বন্ধ হওয়া দরকার, অবিলম্বে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলাগুলো শুধু মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে না, বরং পুরো গাজা উপত্যকায় মানবাধিকার পরিস্থিতিকে এক ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।