সাবেক এমপির বিলাসবহুল প্রাডো জব্দ, জড়িত বিএনপির সাবেক নেতা
বিশেষ সংবাদদাতা :
কুষ্টিয়া শহরের সাফিনা টাওয়ারের বেসমেন্ট থেকে একটি বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। সোমবার (৯ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে ভবনের পার্কিং এলাকা থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। প্রায় তিন মাস ধরে গাড়িটি ভবনের ৭ নম্বর গ্যারেজে অচল অবস্থায় রাখা ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাড়িটি সেখানে এনে রেখেছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বর্তমানে একটি তামাক কোম্পানির নির্বাহী পদে কর্মরত এবং কুষ্টিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে।
সাফিনা টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী আশিকুর রহমান জানান, গত বছরের ১ জুলাই মোস্তাফিজ তিনটি ফ্ল্যাট এবং দুটি গ্যারেজ ভাড়া নেন। একটি গ্যারেজে কোম্পানির আরেকটি গাড়ি রাখা হতো, অন্যটিতে রাখা হয়েছিল জব্দ হওয়া প্রাডোটি। গাড়িটি বাইরে না বেরোলেও মাঝে মাঝে চালক শান্ত এসে ইঞ্জিন চালু করে পরীক্ষা করতেন। প্রায় ২০ দিন আগে মোস্তাফিজ ও তার পরিবার ভবন ছেড়ে দেন।
জব্দ করা গাড়ির ভেতর থেকে পাওয়া একটি হাতে লেখা কাগজে গাড়ির নম্বর, ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বরসহ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ওরফে আনারের নাম পাওয়া যায়। আনোয়ারুল আজীম সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় নির্মমভাবে খুন হন। তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন সাংবাদিকদের জানান, গাড়ির নম্বর দেখে নিশ্চিত হয়েছেন এটি তার বাবার। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গাড়িটির খোঁজ মেলেনি এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পুলিশের মুখপাত্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, “গাড়িটি শুরুতে ভবনের মালিকের জিম্মায় রাখা হয়, পরে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকৃত মালিকানা যাচাইয়ে বিআরটিএ-র সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারি ছুটির কারণে প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত।”
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, মোস্তাফিজ বর্তমানে ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি’ নামে একটি তামাক প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পরিচালক পদে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো নাম ছিল ‘তারা টোব্যাকো’। নাম ও মালিকানা পরিবর্তনের পরেও ব্যবস্থাপনায় বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গাড়ির চালক শান্ত জানান, তিনি আগে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ি চালাতেন। বর্তমানে তিনি তামাক কোম্পানির জিএম বিল্লাল হোসেন ও সিইও জাহিদের গাড়ি চালান। শান্ত জানান, তাদের নির্দেশেই তিনি জব্দ হওয়া গাড়িটির ইঞ্জিন মাঝে মাঝে চালু রাখতেন, তবে প্রকৃত মালিক সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।
ভাড়ার চুক্তিপত্রে থাকা মোস্তাফিজুর রহমানের ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি ধরেন এস এম সালেহ বিন উৎস নামের এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, “এক মাস আগে কোম্পানিতে যোগ দিয়েছি। ভাড়ার মেয়াদ বাড়ানোর সময় আমার নম্বর দেওয়া হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত নম্বর আমার কাছে নেই।”
মেহেরপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোস্তাফিজ একসময় স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি ও জেলা সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন।
বিলাসবহুল এই গাড়ি জব্দের ঘটনায় এলাকায় ও রাজনীতির অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে মোস্তাফিজের পরিবারের একজন সদস্য এই গাড়িতে করে এলাকায় এসেছিলেন।