মুকসুদপুরে হামলার শিকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতা, আহত ৫, আটক ১
নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে পরিকল্পিত হামলার শিকার হয়েছেন মাদারীপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতা-কর্মী। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আহতরা ও তাদের স্বজনরা। ঘটনার পর আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (১০ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে মুকসুদপুর উপজেলার টেকেরহাট উত্তরপাড়ে ‘বরিশাল গেট চাইনিজ অ্যান্ড বাংলা রেস্টুরেন্ট’-এর সামনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে মৌসুমী ফল দিয়ে ফেরার পথে’ রাজৈরের কাশিমপুর এলাকা থেকে শহরের দিকে ফিরছিলেন মাদারীপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। পথিমধ্যে টেকেরহাটে রেস্টুরেন্টে চা-নাস্তার জন্য থামেন তারা।
তখন রেস্টুরেন্টের সামনে পার্কিং করে রাখা ‘মিজান পরিবহন’-এর কিছু বাসকর্মী সংগঠনের নারী সদস্যদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ উঠে। এর প্রতিবাদ করতেই উত্তেজনার সূত্রপাত। শুরুতে কথা-কাটাকাটি হলেও পরে বিষয়টি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এরপরই মিজান পরিবহনের কর্মী ও স্থানীয় কিছু লোক সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়।
হামলায় আহত হন সংগঠনের মুখ্য সংগঠক আশিকুর রহমান হৃদয়, যুগ্ম সদস্য সচিব আশিকুর তামিম আশিক, যুগ্ম আহ্বায়ক মিথিলা ফারজানা নীলা, সদস্য কিরণ আক্তারসহ মোট পাঁচজন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অখিল সরকার জানান, ‘‘হামলার শিকার হয়ে পাঁচজন হাসপাতালে আসেন। তাদের মধ্যে দুইজনকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’
আহত কিরণ আক্তার বলেন, “মেয়েদের ওপরে এভাবে হামলা চালাবে বুঝতেই পারিনি। আমরা শুধু প্রতিবাদ করেছি, তারই এমন ভয়াবহ পরিণতি হবে—তা ভাবিনি। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মাদারীপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, “পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। যারা এই বর্বর হামলা করেছে তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি, সিসিটিভিতে তার প্রমাণ রয়েছে। অবিলম্বে সব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, “ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
এদিকে ঘটনার পর মিজান পরিবহন কর্তৃপক্ষের কারও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একটি সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে কাজ করা সংগঠনের সদস্যদের ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে এমন হামলা আমাদের নীতিগত সংগ্রামের প্রতি হুমকি। দেশের সব মানুষকে এই ঘটনার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”