গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণকেন্দ্রসহ একাধিক স্থানে নিহত ৩৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় বুধবার (১১ জুন) কমপক্ষে ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হতাহতদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত “গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন”-এর একটি ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান করছিলেন। তারা খাদ্য ও মানবিক সহায়তা নিতে এসেছিলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার উত্তরের শিফা ও আল কুদস হাসপাতালের কর্মীদের বরাতে জানা যায়, পরিত্যক্ত নেতজারিম সামরিক বাফার জোনের কাছে স্থাপিত ওই ত্রাণকেন্দ্রের দিকে যাওয়ার সময় অন্তত ২৫ জন প্রাণ হারান। হামলায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে পৃথক একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও অন্তত ১০ জন নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় চিকিৎসাকর্মীরা।
ঘটনার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তারা হামলাগুলিকে “সন্ত্রাসী দমনের অভিযান” হিসেবে উল্লেখ করতে পারে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১০ জুন) রাফাহ শহরের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি আরেকটি হামলায় ১৭ জন নিহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, হতাহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক। এ ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে, তারা সম্ভাব্য হুমকির আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ফাঁকা গুলি চালায়।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলমান যুদ্ধ এবং ক্রমাগত সামরিক অভিযানে গাজার মানবিক পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে গাজার লাখো মানুষের অনাহার, বাস্তুহীনতা এবং স্বাস্থ্যসেবা সংকটের চিত্র উঠে এসেছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার এক বিবৃতিতে দাবি করেন, গাজায় হামাসের হাতে আটক থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” হয়েছে। তবে তিনি একইসঙ্গে সতর্ক করে বলেন, “চূড়ান্ত কোনো চুক্তি এখনও হয়নি, তাই বেশি আশাবাদী হওয়ার সময় আসেনি।”
মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও তাতে কার্যকর কোনো ফল আসছে না। দুই পক্ষই একে অপরকে সমঝোতা না হওয়ার জন্য দায়ী করছে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার ছাড়া কোনো চুক্তি সম্ভব নয়।” অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, “জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া কোনো শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা যাবে না।”
গাজায় একের পর এক বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী শান্তির কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান এই সংঘাত শুধু গাজা নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যই হুমকি হয়ে উঠছে।