ঈদের ছুটিতে ষাটগম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়
বাগেরহাট প্রতিনিধি
ঈদ উল আজহার ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে। এ বছর সুন্দরবনে পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দর্শনার্থীদের চাপ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও প্রত্নত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ছুটির দিনগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতিতে মুখর ছিল মসজিদ এলাকা। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে এসেছেন মুসলিম ঐতিহ্যের এই স্থাপত্য দেখতে। দর্শনার্থীরা জানান, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখা তাদের কাছে ভিন্নরকম আনন্দ বয়ে আনে।
ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদ প্রাঙ্গণে নানা বয়সী দর্শনার্থী ঘুরে বেড়াচ্ছেন আপনজনদের সাথে। কেউ উপভোগ করছেন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার সৌন্দর্য, কেউবা ছবি তুলছেন এই প্রাচীন নিদর্শনের পটভূমিতে। বাগেরহাট যাদুঘরে সংরক্ষিত খানজাহান (রহ.)-এর ব্যবহৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘিরেও দর্শনার্থীদের কৌতূহল লক্ষ্য করা গেছে। শিশুরা মেতে উঠেছে খেলাধুলায় ও রাইডে চড়ায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন দেখা গেছে।
নওগাঁ থেকে আসা দর্শনার্থী হাসান দম্পতি বলেন, “চাকরির ব্যস্ততায় গত দুই ঈদে কোথাও যাওয়া হয়নি। এবার স্ত্রীকে নিয়ে ষাটগম্বুজে এলাম। বাবা-মাকে সাথে নিয়ে ঈদের আনন্দ উদযাপন শেষে এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।”
ঢাকার রামপুরা থেকে পরিবারসহ এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, “অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখার। এবার ঈদের ছুটিতে সে সুযোগ মিলেছে। মুসলিমদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের নিদর্শন নিজের চোখে দেখে অভিভূত হয়েছি। এমন পবিত্র স্থানে ঈদের দিনে পরিবারের সাথে সময় কাটানো সত্যিই আনন্দের।”
দর্শনার্থী শাহিনা বেগম বলেন, “দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছি। মসজিদ ঘুরে দেখার পর তারা দোলনাসহ নানা রাইডসে মেতে উঠেছে। খুব খুশি হয়েছে ওরা। সুযোগ পেলে আবার আসবো।”
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সহায়তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশের বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম জানান, “ঈদ উপলক্ষে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ জেলা পুলিশের সদস্যরাও সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন।”
প্রত্নত্ত্ব অধিদপ্তরের বাগেরহাট কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, “ঈদের দিন মসজিদে প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন। ঈদের ছুটির প্রথম তিন দিনে প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরে গেছেন। এসময়ে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৭ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। দর্শনার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।”
ঐতিহাসিক এই স্থাপনায় দর্শনার্থীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি প্রমাণ করে, বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজও মানুষকে টানে এবং প্রেরণা জোগায়।