আজীজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার, বাগেরহাট
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বিশ্বরোড এলাকার সরকারি মূলঘর স্কুল মোড়ে সোমবার (৯ জুন) গভীর রাতে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একজন যাত্রী নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ২০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে রাত আনুমানিক ২টার দিকে, যখন ঢাকা থেকে খুলনাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় বাসটি অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি রাস্তার পাশে সরে গিয়ে একটি বড় গাছের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তীব্র গতির আঘাতে বাসটির সামনের অংশ সম্পূর্ণরূপে দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ভিতরে থাকা যাত্রীরা দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় পুরো এলাকা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
বাসটির সামনের অংশ এতটাই বিকৃত হয়ে যায় যে, ভেতরে আটকে পড়া যাত্রীদের অনেককে উদ্ধার করতে স্থানীয় জনতা ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দীর্ঘ সময় লেগে যায়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং ফকিরহাট উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহত ব্যক্তির পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে গুরুতর আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফকিরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান,
“দুর্ঘটনার সময় বাসটি খুব দ্রুতগতিতে চলছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, চালক হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন অথবা অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
তবে চালকের অবহেলা, ক্লান্তি বা পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব – এসব বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে বলে তিনি জানান। বাসটি কোন ডিপো থেকে ছেড়েছিল, চালক ও হেলপারের বৈধ কাগজপত্র ছিল কি না, এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও দেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় বাস চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব, অতিরিক্ত গতি ও যান্ত্রিক ত্রুটি – এ সবই বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সড়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন,
“রাতের বেলায় যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও চালকদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। বাস কোম্পানিগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং চালকদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা যাচাই না করে দায়িত্বে বসানো উচিত নয়।”
এ দুর্ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, গতিসীমা নির্ধারণ ও রাতের বেলায় অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।
ফকিরহাট উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের কাজ চলছে এবং পরিবহন মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত সভা করে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।