পুঠিয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম দিয়েছে চাঁদা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ হামলা চালিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুল হান্নান উপজেলার হাতিনাদা গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয়ভাবে একজন কাঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় বিএনপি নেতা এবং বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম তাঁর কাছে গত ৫ আগস্টের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রাণনাশের হুমকি ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের ভয় দেখানো হয়।
হান্নান জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয় নন্দনপুর বাজারের একটি চায়ের দোকানে। সেখানে তাঁর ছোট ছেলে তুষার আহমেদ মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে বসে ছিল। এসময় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে চোখাচোখি হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তুষারকে মারধর করেন। হান্নান প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই রফিকুল ইসলাম তার দলবল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় হান্নানের বাড়িতে চড়াও হন।
হান্নান বলেন, “আমি বড় ছেলেকে নিয়ে পাশের একটি চাতালে আশ্রয় নিই। এ সময় হামলাকারীরা বাড়ির বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। রান্নাঘর, খড়ির ঘর ও একটি ছোট ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে দুটি ছাগল ও একটি গরু পুড়ে মারা যায়। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”
তিনি আরও জানান, বাড়ির শোবার ঘরগুলোতেও হামলা হয়, তবে সেগুলোতে আগুন ধরানো হয়নি। ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। হান্নানের দাবি, এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যমূলক।
এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে পুঠিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন আবদুল হান্নান। এতে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে রফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন জানান, “ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এজাহার গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আবদুল হান্নান আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন। শুধু ভোট দেন। তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে জড়িত নন, সেটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।”
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যেও ঘটনার বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার এক যুবক ইকবাল হোসেন বলেন, “তুষার ও তাঁর মামাতো ভাই দোকানে হাসাহাসি করছিলেন। রফিকুল ইসলাম মনে করেন তাঁকে উদ্দেশ্য করে হাসাহাসি করা হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তুষারকে মারেন। পরে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে হান্নান চিৎকার করেন এবং কিছু সময় পরেই হামলা হয়।”
ঘটনার পর রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েও দেখা গেছে, প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে এবং বাড়ি ফাঁকা। বাড়ির দেয়ালে কুড়ালের কোপ ও টিনের চালায় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, রফিকুল নিজেই এই চিহ্ন দেখিয়ে প্রচার করছেন যে, তিনি হামলার শিকার হয়েছেন।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।