হারুন অর রশিদ, স্টাফ রিপোর্টার:
নরসিংদীর শিবপুরে এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন তরুণ বন্ধু। সোমবার (৯ জুন) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা-শিবপুর আঞ্চলিক সড়কের বান্দারদিয়া পেট্রল পাম্প এলাকায় দ্রুতগামী একটি বাস মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজনই একই গ্রামের বাসিন্দা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
নিহতরা হলেন—
তাঁরা সবাই শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের মির্জাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাতে তিন বন্ধু একটি মোটরসাইকেলে করে খেলার সামগ্রী কিনতে নরসিংদী শহরে যান। শহর থেকে ফেরার পথে বান্দারদিয়া পেট্রল পাম্প এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া বাস তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
বাসটির ধাক্কায় মোটরসাইকেলের তিন আরোহী ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা ও শিবপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুল ও আশিককে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অপুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
একই গ্রামে বসবাস, একসঙ্গে বড় হওয়া এবং খেলাধুলার সঙ্গী—তিন বন্ধুর একসঙ্গে মৃত্যু মির্জাকান্দি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিথর হয়ে গেছে একটি তরুণ প্রজন্ম।
নিহতদের বন্ধু ওবায়দুল হক বলেন, “ওরা তিনজনই খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। নিয়মিত মাঠে খেলত। খেলার সামগ্রী আনতে গিয়ে আজ ওদের আর ফিরে আসা হলো না। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।”
শিবপুর ফায়ার সার্ভিসের তত্ত্বাবধায়ক ইসমাইল বলেন, “খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করি। দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন এবং একজনকে ঢাকা পাঠানো হয়।”
শিবপুর মডেল থানার ডিউটি অফিসার হোসনেয়ারা বেগম জানান, নিহতদের মরদেহ থানায় রয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে ঘাতক বাস ও চালক শনাক্তে কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
এই দুর্ঘটনা আরও একবার সড়ক নিরাপত্তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইটাখোলা-শিবপুর আঞ্চলিক সড়কে নিয়মিতভাবে দ্রুতগতির যান চলাচল হয় এবং সেখানে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই।
নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী এ ঘটনায় শোক প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এই তিন তরুণের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আমাদের আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়, সড়ক যেন শুধু চলাচলের পথ নয়—অসতর্কতার কারণে সেটি হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুফাঁদ। সময় এসেছে সড়ক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার।