গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ দখলে নিয়েছে ইসরায়েল
আন্তর্জাতিক ডেক্স :
গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য বহুল প্রত্যাশিত ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জোরপূর্বক দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত এই মানবিক সহায়তাবাহী জাহাজটি ইতালির কাতানিয়া থেকে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ইসরায়েলি নৌবাহিনী সেটিকে আটক করে এবং ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটি আটক করেছে। তারা এই জাহাজটিকে ‘‘সেলফি ইয়ট’’ এবং এতে থাকা ব্যক্তিদের ‘সেলিব্রিটি’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রচারমূলক নাটক সাজানোর অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবি, জাহাজে থাকা মানবাধিকারকর্মীরা মানবিক সাহায্যের নামে মূলত গণমাধ্যমে প্রচারের উদ্দেশ্যে কাজ করছেন।
বিশেষভাবে সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসানসহ অন্যান্যদের উল্লেখ করে ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জাহাজ থেকে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। টেলিগ্রামে একটি ছবি প্রকাশ করে তারা দেখিয়েছে—জাহাজে থাকা মানবাধিকারকর্মীরা হাতে তুলা অবস্থায় বসে আছেন, যা ইসরায়েলি হস্তক্ষেপের প্রমাণ।
জাহাজে থাকা ১২ জন মানবাধিকারকর্মী হলেন:
১ জুন ইতালির সিসিলির কাতানিয়া শহর থেকে যাত্রা শুরু করে ‘ম্যাডলিন’। এটি ছিল ইসরায়েলের দ্বারা গত ২ মার্চ থেকে আরোপিত পূর্ণ অবরোধের বিরুদ্ধে এক ধরনের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা। অবরোধের কারণে গাজায় প্রবেশ করা বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের ত্রাণ, যার ফলে ইতোমধ্যেই বহু শিশু অনাহারে মারা গেছে।
জাহাজটিতে বহন করা ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল:
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে, গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ বর্তমানে তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটি ছিল একটি প্রতীকী এবং বাস্তবিক সহায়তার মাধ্যম। এফএফসির মতে, এটি শুধু মানবিক নয়, নৈতিক দায়িত্বও বটে।
জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে গাজার প্রথম ও একমাত্র নারী মৎস্যশিকারি ম্যাডলিন-এর নাম অনুসারে, যিনি গাজার প্রতিরোধ ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠতে শুরু করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলছে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং মানবিক সাহায্যে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে আরও একবার তার দখলদার নীতিকে তুলে ধরেছে। বিশ্বজুড়ে মানুষের চোখ এখন ‘ম্যাডলিন’ জাহাজ এবং তাতে থাকা মানবাধিকারের যোদ্ধাদের দিকেই।