বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সম্প্রতি ডিবিসি নিউজের একটি টকশোতে অংশ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন। তিনি তার কারাবাসের অভিজ্ঞতা, জেলের অভ্যন্তরীণ অবস্থা, এবং ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে বন্দী অবস্থায় ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি তুলে ধরেন।
ডা. শাহাদাত বলেন, “মেহেদীর কথা নিশ্চয় মনে আছে। ওই যে ডিসি মেহেদী, তখন সে চট্টগ্রামে ছিল। সে আমার পুরো হাসপাতাল ঘিরে ফেলে বিকেল পাঁচটার দিকে রোগী দেখার সময় আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস জেলখানায় কাটাতে হয়। এমনকি ঈদুল ফিতরের মতো আনন্দের দিনও জেলের ভেতরে কাটাতে হয়।”
তিনি জানান, জেলে তাকে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, বরং একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে ‘ডিভিশন’ দেওয়া হয়েছিল। তিনি ছিলেন তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি সেলে। একটিতে তিনি নিজে, অপরটিতে ছিলেন কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিল সাহেবের ছেলে ইয়াসিন এবং তৃতীয়টিতে ছিলেন বহুল আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
ডা. শাহাদাত বলেন, “প্রদীপের সাথে কেউ কথা বলত না। একদিন সে আমাকে ডেকে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘শাহাদাত ভাই, আমার সাথে কেউ কথা বলে না। একটু কথা বলেন।’ আমি জানতে চাইলাম, ‘তুমি এত কষ্টে কেন?’ তখন ইয়াসিন বলে উঠল, ‘ভাইয়ের সাথে কথা বলবেন না, সে খুনি। সে অনেক খুন করেছে, ১০০ টার উপরে।’”
এই পর্যায়ে ডা. শাহাদাত ওসি প্রদীপকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, “তুমি কয়টা খুন করছো?”
প্রদীপ উত্তর দেয়, “১০০টার মতো হবে।”
এরপর যা উঠে আসে, তা আরও ভয়াবহ। ডা. শাহাদাতের ভাষ্য অনুযায়ী, ওসি প্রদীপ বলেন, “এই খুনগুলো আমি ইচ্ছেমতো করিনি। আমাকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নির্দেশনা দিতেন—কিভাবে খুনটা করতে হবে, কোথায় করতে হবে।”
এই বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ডা. শাহাদাত আরও বলেন, “এই ঘটনা আমার ১৬ বছরের রাজনীতির অভিজ্ঞতার একটি সামান্য অংশ মাত্র। বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে কী ভয়াবহ অমানবিকতা ও নির্যাতনের সংস্কৃতি বিরাজমান, তা আমি নিজে চোখে দেখেছি।”
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া:
এই মন্তব্যগুলো সত্য হলে তা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা ও নৈতিক অবস্থানকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি গভীর চিত্রও তুলে ধরে।