তজুমদ্দিনে যৌতুকের টাকার জন্য জামাতার হামলা: হাতুড়ির আঘাতে শ্বশুর গুরুতর আহত
স্টাফ রিপোর্টার, ভোলা
ভোলার তজুমদ্দিনে যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী ও শ্বশুরের ওপর নৃশংস হামলার অভিযোগ উঠেছে এক জামাতার বিরুদ্ধে। হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন শ্বশুর মো. সিদ্দিক (৬০)। বর্তমানে তিনি তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (৮ জুন) রাতে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের চর জহিরউদ্দিন এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মো. শিবলু (২১) একই এলাকার ইব্রাহীম মাঝির ছেলে। প্রায় আড়াই মাস আগে চর জহিরউদ্দিন জহুরা আবাসনের বাসিন্দা মো. সিদ্দিকের মেয়ে লিজা বেগমের (১৮) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে শিবলু। একপর্যায়ে পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক বিয়ে করে এবং বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর বাড়িতে বসবাস শুরু করে।
বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় নির্যাতন
বিয়ের পর স্বাভাবিক বৈবাহিক জীবনের পরিবর্তে লিজা ও তার পরিবারের জন্য শুরু হয় এক ভয়ানক দুঃসময়। অভিযোগ রয়েছে, শিবলু নিয়মিতভাবে স্ত্রী লিজা ও তার পরিবারকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্ত্রীকে মারধর করত সে।
হাতুড়ি দিয়ে আঘাত: রক্তাক্ত শ্বশুর হাসপাতালে
রবিবার রাতে শিবলু তার বন্ধু শামীমকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসে আবারও যৌতুক দাবি করে। টাকা না দিলে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে কথা-কাটাকাটির মধ্যে শিবলু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং শ্বশুর মো. সিদ্দিককে কিল-ঘুষি মারার পর, হাতে থাকা একটি হাতুড়ি দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
অভিযোগ অস্বীকার জামাতার
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিবলু নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কাউকে মারিনি। আমার শ্বশুর নিজেই মাথা ফাটিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।” তবে স্থানীয় বাসিন্দারা তার বক্তব্যকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন।
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পুলিশের
তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহব্বত খান বলেন, “এ বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
পারিবারিক সহিংসতা ও যৌতুক: সামাজিক ব্যাধি
এই ঘটনা আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে, যৌতুক-প্রথা ও পারিবারিক সহিংসতা দেশের গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত সমাজে কতটা ভয়ানকভাবে বিদ্যমান। নারীর প্রতি সহিংসতা ও পরিবারে আর্থিক চাপ প্রয়োগ করে সম্পর্ক নষ্ট করার যে অপসংস্কৃতি সমাজে গড়ে উঠছে, তা রোধে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা।