গভীর রাতে দেশে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
নিজেস্ব প্রতিবেদন:
গভীর রাতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রবিবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট (টিজি-৩৩৯)যোগে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমান থেকে হুইল চেয়ারে করে নামিয়ে আনা হয় তাকে। এ সময় তার পরনে ছিল একটি সাধারণ শার্ট ও লুঙ্গি, যা তার শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আরামদায়ক পরিধান হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ তার দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল না। রাত ১টা ৪৫ মিনিটে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে পৌঁছান আবদুল হামিদ। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত ২টা ২৫ মিনিট) ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। হুইল চেয়ারে বসে তিনি অপেক্ষা করছিলেন।
এর আগে, ৮ মে গভীর রাতে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ ফ্লাইটে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাংকক যান আবদুল হামিদ। তাঁর এ যাত্রা ছিল কিছুটা আলোচিত ও সমালোচিত, কারণ তিনি একটি ফৌজদারি মামলার আসামি হিসেবে দেশ ত্যাগ করেন।
চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলায় তার সঙ্গে আরও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মামলাটি দায়েরের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে।
আবদুল হামিদের বিদেশ যাত্রার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযুক্তরা হলেন:
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ না করেই আবদুল হামিদকে দেশ ছাড়ার সুযোগ করে দেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি এবং তার বিদেশ যাত্রা—দুটিই দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। সমালোচকরা প্রশ্ন তোলেন, একজন ফৌজদারি মামলার আসামি কীভাবে এত সহজে দেশ ত্যাগ করতে পারেন। সরকারপক্ষ এ বিষয়ে তেমন কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কিছুটা জবাবদিহিতার চেষ্টা দেখা যায়।
আবদুল হামিদ দেশে ফিরলেও তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার কী পরিণতি হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তিনি কি আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন, নাকি কোনো আইনি সুরক্ষা পাবেন—এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তার ভবিষ্যৎ গতি-পথ ও রাজনৈতিক পরিবেশের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।