শোকাবহ ঈদ: বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের করুণ মৃত্যু
আপেল মাহমুদ, জেলা প্রতিনিধি, বগুড়া।
বগুড়া, ৭ জুন ২০২৫: আনন্দের বদলে বুকভরা হাহাকার। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে যখন সারা দেশজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ, ঠিক সেই মুহূর্তেই বগুড়ার শাজাহানপুরে ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা। ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে পিতার কাঁধে চড়ে যে শিশু যাচ্ছিল, মুহূর্তেই প্রাণ হারায় সে। সেই সঙ্গে প্রাণ হারান তার বাবা চাঁন মিয়াও। ঈদের সকালে এমন করুণ মৃত্যুর খবরে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নিহতরা হলেন—শাজাহানপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া (৩৫) এবং তার ৬ বছর বয়সী শিশু পুত্র আবদুল্লাহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৭টার দিকে চাঁন মিয়া তার একমাত্র পুত্র আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ৯ মাইল এলাকার স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী একটি অজ্ঞাত যানবাহন তাদের সজোরে ধাক্কা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাড়িটি এত দ্রুতগতিতে ছুটছিল যে ধাক্কা খাওয়ার পর বাবা-ছেলে দু’জনই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। চাঁন মিয়া ঘটনাস্থলেই অচেতন হয়ে পড়েন এবং আবদুল্লাহ গুরুতরভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছিল।
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মাথায় গুরুতর আঘাতের ফলে তাদের মৃত্যু ঘটে।
এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঈদের আনন্দ এক নিমিষেই পরিণত হয় বুকভাঙা আহাজারিতে। প্রতিবেশীরা জানান, চাঁন মিয়া ছিলেন একজন নিরীহ ও পরিশ্রমী মানুষ। তার একমাত্র সন্তান আবদুল্লাহকে ঘিরেই ছিল তার জীবনের সমস্ত স্বপ্ন ও ভালোবাসা।
নিহতের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তারা আগে কখনো দেখেননি। ঈদের দিন সকালবেলা যখন সবাই খুশিতে বিভোর, তখন এমন অকালমৃত্যু যেন ঈদের সমস্ত আনন্দকেই মুছে দিয়েছে।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘাতক যানবাহনটি এখনো শনাক্ত করা যায়নি, তবে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের মাধ্যমে গাড়িটি শনাক্ত ও চালককে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নিহতদের জানাজা আজ বিকেলে নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে, পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ। অনেকেই বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানতে না পারলে এমন শোকাবহ দিন বারবার ফিরে আসবে।
শেষকথা:
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। এমন ট্র্যাজেডি যেন আর না ঘটে, তার জন্য সকলের সচেতনতা, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগ অপরিহার্য। ঈদ হোক জীবনের জয়গান, মৃত্যু নয়।